ভেনেজুয়েলার কুখ্যাত ‘ট्रेन দে আরাগুয়া’ গ্যাং: যুক্তরাষ্ট্র কেন তাদের উপর কড়া হচ্ছে?
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ভেনেজুয়েলার একটি কুখ্যাত অপরাধী চক্র ‘ট्रेन দে আরাগুয়া’র সদস্যদের বিতাড়িত করার ঘটনা বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি, এই গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২৬১ জনকে এল সালভাদরের একটি কঠোর নিরাপত্তা কারাগারে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন এই বিতাড়নের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে পুরোনো ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’-এর আশ্রয় নেয়, যা সাধারণত যুদ্ধকালীন সময়ে ব্যবহৃত হয়। এই পদক্ষেপটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, কারণ একজন ফেডারেল বিচারক বিতাড়ন প্রক্রিয়া বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন।
হোয়াইট হাউস অবশ্য দাবি করেছে যে, বিতাড়িত হওয়া ব্যক্তিরা যখন দেশ ছেড়ে যায়, ততক্ষণে বিচারকের আদেশ জারি হয়ে গিয়েছিল, তাই তারা আদালতের নির্দেশ অমান্য করেনি। তবে, ‘ট्रेन দে আরাগুয়া’ গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ এই প্রথম নয়।
গত ২০শে জানুয়ারি একটি নির্বাহী আদেশে এই গ্যাং এবং সালভাদরের কুখ্যাত এমএস-১৩ গ্যাং-কে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে, এই তালিকায় যুক্ত হয় আরও ৬টি মেক্সিকান মাদক কার্টেল।
তবে, সমালোচকরা এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে বলছেন, বিতাড়িত হওয়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হয়নি এবং গ্যাংয়ের সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণও পেশ করা হয়নি। বিতাড়িত হওয়া কয়েকজন, যেমন ড্যানিয়েল সিম্যানকাস রদ্রিগেজ, যারা এই গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
রদ্রিগেজকে মার্কিন কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করেছিল, কারণ তার শরীরে ট্যাটু ছিল এবং তিনি গ্যাংয়ের উৎপত্তিস্থল মারাকাই থেকে এসেছিলেন। তিনি সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, “আমার বাড়ি মারাকাইয়ে, এই কারণে তারা আমাকে আলাদা করে ফেলেছিল। তাদের চোখে, আমি যেন ‘ট्रेन দে আরাগুয়া’রই একজন।”
আসুন, জেনে নেওয়া যাক ‘ট्रेन দে আরাগুয়া’ গ্যাং সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
১. ভেনেজুয়েলার গণ্ডি পেরিয়ে বিস্তার:
এই অপরাধী চক্রের উদ্ভব ভেনেজুয়েলার একটি কারাগারে। এরপর এটি ধীরে ধীরে উত্তর ও দক্ষিণে তাদের কার্যক্রম বিস্তার করেছে।
বর্তমানে, তাদের তৎপরতা যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত।
২. অপরাধের বহুমাত্রিকতা:
এই গ্যাং মানব পাচার ও অভিবাসীদের লক্ষ্য করে নানা অপরাধ করে থাকে। এছাড়াও, তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অপহরণ, অর্থ পাচার এবং মাদক ব্যবসার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (ওএফএসি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
৩. ত্রাস সৃষ্টি:
‘ট्रेन দে আরাগুয়া’ গ্যাং শুধু ভেনেজুয়েলাতেই নয়, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, চিলি এবং পেরুর মতো দেশগুলোতেও ত্রাসের সৃষ্টি করেছে।
কলম্বিয়ার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও দেশটির জাতীয় পুলিশের প্রধান জেনারেল অস্কার নারানজো এই গ্যাংটিকে “বর্তমানে ল্যাটিন আমেরিকায় সক্রিয় সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অপরাধী সংগঠন” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
৪. আন্তঃদেশীয় নেটওয়ার্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, কলম্বিয়ার সীমান্ত শহর ভিলা দেল রোজারিও এবং নর্টে দে সানটান্ডারে ‘ট्रेन দে আরাগুয়া’ এবং একটি গেরিলা গোষ্ঠী ‘ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ যৌন ব্যবসার নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে।
তারা অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভেনেজুয়েলার অভিবাসী এবং বাস্তুচ্যুত কলম্বিয়ানদের যৌন ব্যবসায় বাধ্য করে।
৫. যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাংয়ের উপস্থিতি:
মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন এবং এফবিআই জানিয়েছে, এই গ্যাং এখন যুক্তরাষ্ট্রেও সক্রিয়।
টেক্সাসের এল পাসোর এফবিআই বিশেষ প্রতিনিধি ব্রটন বয়েড জানিয়েছেন, “তারা অভিবাসন পথ অনুসরণ করে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে অন্যান্য দেশে তাদের কার্যক্রম বিস্তার করেছে এবং উত্তর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকেও তাদের কার্যক্রম প্রসারিত করছে।”
ডিসেম্বরে, কলোরাডোর অরোরা শহরে এক দম্পতিকে অপহরণ করা হয়, যাদের সঙ্গে ‘ট्रेन দে আরাগুয়া’ গ্যাংয়ের সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
৬. গ্যাংয়ের উত্থান ও কার্যক্রম:
২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ‘ট्रेन দে আরাগুয়া’ নামটি পরিচিতি লাভ করে।
তবে, এর কার্যক্রম আরও আগে থেকেই শুরু হয়েছিল।
জানা যায়, এই গ্যাংয়ের সদস্যরা মূলত শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে এসেছে, যারা একটি রেল প্রকল্পের নির্মাণ কাজে জড়িত ছিল, যা দেশটির কেন্দ্র-পশ্চিমকে সংযুক্ত করার কথা ছিল।
ভেনেজুয়েলার কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ‘ট्रेन দে আরাগুয়া’র প্রধান নেতাদের নির্মূল করেছে এবং দেশটির বৃহত্তম কারাগার টোকোরন-কে তাদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেছে।
ওয়াশিংটন অফিসের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ‘অফিস অন ল্যাটিন আমেরিকা’র প্রতিরক্ষা তত্ত্বাবধান পরিচালক অ্যাডাম আইজ্যাকসন সিএনএন-কে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে গ্যাংটির দৈনন্দিন কার্যক্রমে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।
তথ্য সূত্র: সিএনএন