১০০ বছর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে আঘাত হানা এক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল জনপদ। ১৯২৫ সালের ১৮ই মার্চ তারিখে আঘাত হানা এই ‘ট্রাই-স্টেট টর্নেডো’ নামের ঘূর্ণিঝড়টি ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহতম, যা মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে।
এটি মিসৌরি, ইলিনয় এবং ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালিয়ে যায়, যার ফলে প্রায় ৭০০ মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু হয় এবং আহত হয় ২ হাজারের বেশি।
ঘূর্ণিঝড়টি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে আধুনিক পরিমাপ অনুযায়ী এটি ছিল ৫ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়, যার বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ২৬০ মাইলের বেশি। এর ধ্বংসলীলার সাক্ষী হিসেবে এখনো টিকে আছে লোগান স্কুলের মাঠের একটি দৃশ্য।
একটি কাঠের তক্তা, যার দৈর্ঘ্য ছিল ৪ ফুট, সেটি একটি ম্যাপেল গাছের গুঁড়ির মধ্যে এমনভাবে ঢুকে গিয়েছিল যে একজন মানুষের ওজনও এটি ধারণ করতে পারতো।
এই ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র ছিল মিসৌরির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। সেখান থেকে প্রায় ২১৯ মাইল পথ অতিক্রম করে এটি ইলিনয়ের দক্ষিণ অঞ্চল এবং ইন্ডিয়ানার দিকে অগ্রসর হয়।
এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল ইলিনয়ের মারফিসবোরো শহরটি। শহরটির প্রায় ৪০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এবং সেখানে মৃতের সংখ্যা ছিল ২৩৪ জন।
এছাড়াও অ্যানাপলিস, গোরহাম এবং গ্রিফিথ শহরগুলিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
তৎকালীন সময়ে, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ফলে, মানুষজন ঝড়ের আগমন সম্পর্কে জানতে পারতো না এবং দ্রুত আশ্রয় নেওয়ারও কোনো সুযোগ ছিল না।
ঝড়ের ভয়াবহতা এতটাই তীব্র ছিল যে এটি মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু তছনছ করে দিত।
মারফিসবোরোতে ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হওয়া পরিবারগুলোকে সাহায্য করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সরবরাহ করা হয়েছিল। রেড ক্রস ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তাঁবুর ব্যবস্থা করে এবং বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ডাক্তার ও উদ্ধারকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সহায়তা করেন।
এই ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা কাটিয়ে মারফিসবোরো শহরটি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো তাদের ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণ করে এবং শহরের মানুষজন তাদের পুরনো জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করে।
বর্তমানে, এই ঘটনার ১০০ বছর পর, স্থানীয় ঐতিহাসিক সোসাইটি এই দুর্যোগের শিকার হওয়া মানুষ ও তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এই অনুষ্ঠানগুলি তাদের সাহস ও ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতাকে সম্মানিত করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে, ঘূর্ণিঝড় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের এই অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায়ই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে, যা জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে।
তাই, এই ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের আরও সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখতে হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস