ট্রাইসেরাটপস সম্পর্কে ১০টি চমকপ্রদ অজানা তথ্য!

ডাইনোসরদের জগৎ সবসময়ই মানুষকে আকৃষ্ট করে। যাদের বিশাল আকার, ভয়ঙ্কর চেহারা এবং বিলুপ্তিরহস্য- তাদের সম্পর্কে জানতে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই।

এই আকর্ষণীয় প্রাণীগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ট্রাইসেরাটপস। এদের বিশাল শরীর, তিনটি শিং এবং ঘাড়ের চারপাশে থাকা শক্ত প্লেট এদের বিশেষভাবে পরিচিত করে তোলে।

চলুন, ট্রাইসেরাটপস সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য জেনে নেওয়া যাক:

একসময় ট্রাইসেরাটপসের জীবাশ্মকে ভুল করে বিশাল আকৃতির বাইসনের শিং হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ১৮৮৭ সালের বসন্তে, জর্জ লাইম্যান ক্যানন নামক একজন ব্যক্তি কলোরাডোতে বিশাল আকারের দুটি শিং খুঁজে পান।

তিনি সেগুলোকে শনাক্তকরণের জন্য আমেরিকান জীবাশ্মবিদ ওথনিয়েল চার্লস মার্শের কাছে পাঠান। মার্শ প্রথম দেখায় সেগুলোকে প্রাচীন বাইসনের শিং ভেবে ভুল করেন।

তবে, পরবর্তীতে একই অঞ্চলে আরও জীবাশ্ম আবিষ্কারের পর মার্শ বুঝতে পারেন যে, এগুলো আসলে ডাইনোসরের, যা বর্তমানে আমরা ট্রাইসেরাটপস নামে চিনি, সেই প্রাণীর শিং ছিল।

ট্রাইসেরাটপস মূলত ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষের দিকে, প্রায় ৬ কোটি ৬০ লক্ষ বছর আগে উত্তর আমেরিকায় ঘুরে বেড়াত। তাই এদের জীবাশ্মও প্রধানত এই অঞ্চলে পাওয়া যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো, মন্টানা, নর্থ ডাকোটা, সাউথ ডাকোটা এবং ওয়াইওমিং-এর আশেপাশে এদের জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়াও, কানাডার আলবার্টা এবং সাসকাচুয়ানেও এদের কিছু জীবাশ্ম পাওয়া গেছে।

ট্রাইসেরাটপস নামটি এসেছে গ্রিক শব্দ থেকে, যার অর্থ “তিন শিং বিশিষ্ট মুখ”। এদের মাথার সামনের দিকে দুটি এবং নাকের উপরে একটি শিং ছিল।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই শিংগুলো সম্ভবত নিজেদের মধ্যে লড়াই, শিকারিদের থেকে আত্মরক্ষা অথবা সঙ্গীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতো।

ছোট ট্রাইসেরাটপসের শিংগুলো প্রথমে সোজা ও ছোট ছিল, কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেগুলো বাঁকা হতে শুরু করত।

এদের ঘাড়ের শক্ত প্লেট বা ফ্রিল সম্ভবত শিকারীদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে সাহায্য করত। এছাড়াও, সঙ্গীকে আকৃষ্ট করতেও এটি কাজে লাগত।

ট্রাইসেরাটপসের মুখ ছিল অনেকটা পাখির মতো, শক্ত এবং বাঁকানো। এই ধরনের মুখ তাদের ঘাস এবং অন্যান্য শক্ত উদ্ভিদ ছিঁড়ে খেতে সাহায্য করত।

এদের দাঁতগুলো সারিবদ্ধভাবে সজ্জিত ছিল, যা খাবার চিবানোর জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল। ট্রাইসেরাটপসের দাঁতের গঠন মানুষের দাঁতের চেয়ে অনেক বেশি জটিল ছিল।

ট্রাইসেরাটপস আকারে হাতির মতোই বিশাল ছিল। পূর্ণবয়স্ক একটি ট্রাইসেরাটপসের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ থেকে ৯ মিটার পর্যন্ত হতে পারত এবং ওজন হতো ৬ থেকে ১০ মেট্রিক টনের মতো।

এদের মাথা শরীরের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত লম্বা হতে পারত।

২০১৬ সালে, মন্টানার হেল ক্রিক ফরমেশনে বিজ্ঞানীরা একটি বিশেষ জীবাশ্ম আবিষ্কার করেন, যা “ডুয়েলিং ডাইনোসরস” নামে পরিচিত। এই জীবাশ্মে একটি ট্রাইসেরাটপস এবং একটি টি-রেক্সের কঙ্কাল পাওয়া যায়, যা সম্ভবত লড়াইরত অবস্থায় মারা গিয়েছিল।

ট্রাইসেরাটপসের শরীরে টি-রেক্সের দাঁতের আঘাতের চিহ্নও ছিল।

ট্রাইসেরাটপস ছিল তৃণভোজী, অর্থাৎ এরা ঘাস, ফার্ন এবং অন্যান্য নিচু জাতের উদ্ভিদ খেত। তাদের শক্তিশালী শিং এবং শারীরিক গঠন তাদের গাছের পাতা ছিঁড়তেও সাহায্য করত।

ডাইনোসরদের মধ্যে ট্রাইসেরাটপস খুবই জনপ্রিয় একটি প্রজাতি। এদের বিশাল আকার, আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য এবং টি-রেক্সের মতো শক্তিশালী প্রাণীর বিরুদ্ধে টিকে থাকার ক্ষমতা—এগুলোই ট্রাইসেরাটপসকে মানুষের কাছে এত প্রিয় করে তুলেছে।

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *