ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের ১০০ দিন: প্রতিশ্রুতি ও তার বাস্তবায়ন
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর ১০০ দিন পার করেছেন। এই সময়ে তিনি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো কতটা পূরণ করতে পেরেছেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
তার নেওয়া কিছু পদক্ষেপ এরই মধ্যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, আবার কিছু ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছেন।
অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতিগুলোর দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখা যায়, ট্রাম্প মূল্যস্ফীতি কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যদিও তার আমলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে, তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর পেছনে অন্যান্য কারণও ছিল।
তিনি শুল্ক আরোপের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তার কারণে বাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়াও, তিনি দেশের ঋণ পরিশোধের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কর হ্রাসের পরিকল্পনা নিলে তা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ট্রাম্প প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দেখা গেছে। মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
তবে অভিবাসন বিষয়ক নীতিমালায় কঠোরতা অবলম্বন করায় অনেককে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যুৎ বিল কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, ক্ষমতায় আসার পর এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে তিনি এই খরচ অর্ধেক বা তার চেয়েও বেশি কমিয়ে আনবেন।
তবে এই বিষয়ে এখনো কোনো দৃশ্যমান ফল পাওয়া যায়নি।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের নীতি বেশ স্পষ্ট। তিনি বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছেন, বিশেষ করে চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর।
এই পদক্ষেপের কারণে শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দেখা গেছে।
তবে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের কিছু প্রতিশ্রুতি এখনো পূরণ হয়নি।
বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও, বাস্তবে তেমন কিছু ঘটেনি।
কর কমানোর বিষয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কংগ্রেসের সমর্থন প্রয়োজন। তিনি টিপস, ওভারটাইম এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর বাতিল করার কথা বলেছিলেন।
তবে এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
শিক্ষাব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু বিতর্কিত পদক্ষেপ দেখা গেছে। তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ তুলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এছাড়া, “উইক” নীতিমালার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তিনি সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতে পরিবর্তন এনেছেন।
ট্রান্সজেন্ডার অধিকারের বিষয়েও ট্রাম্প তার আগের অবস্থানে অনড় রয়েছেন।
তিনি খেলোয়াড়দের দল থেকে ট্রান্সজেন্ডারদের বাদ দেওয়া এবং এই সংক্রান্ত অন্যান্য অধিকারের বিরোধিতা করেছেন।
সরকারের কার্যকারিতা বাড়াতে ট্রাম্পের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন ইলন মাস্ক। ফেডারেল অফিসে কর্মী ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে সরকারের ব্যয় কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবে এই ক্ষেত্রেও বড় ধরনের কোনো সাশ্রয় হয়নি।
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতি তিনি পূরণ করেছেন।
প্রায় ১,৫০০ জনকে তিনি ক্ষমা করেছেন।
পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রেও ট্রাম্প কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন।
তিনি জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদনকে উৎসাহিত করার জন্য নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনের কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কিছু ক্ষেত্রে তিনি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন, আবার কিছু ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়নি।
তার নেওয়া পদক্ষেপগুলোর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়।
তথ্য সূত্র: নিজস্ব প্রতিবেদন