মিথ্যা বলছেন ট্রাম্প? মিশিগানের সমাবেশে বিস্ফোরক তথ্য!

মিশিগানে এক জনসভায় ট্রাম্পের বিভিন্ন দাবি, কতটা সত্যি?

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি মিশিগানের ওয়ারেনে এক জনসভায় ভাষণ দেন। আসন্ন নির্বাচনের আগে দেওয়া সেই ভাষণে তিনি তার আগের সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরেন এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন। তবে, ভাষণ দেওয়ার সময় ট্রাম্পের করা বিভিন্ন দাবির সত্যতা যাচাই করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।

তাদের অনুসন্ধানে কিছু তথ্যের অসংগতি ধরা পড়েছে।

ট্রাম্পের ভাষণে উঠে আসা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের সময়কালে সংবাদমাধ্যম, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন প্রতিবাদী সংগঠনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী ছিল।

উদাহরণস্বরূপ, একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যায়, যেখানে ‘দি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’-এর সাংবাদিকদের হোয়াইট হাউসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল, সংবাদ সংস্থাটি মেক্সিকো উপসাগরকে ‘g combined Gulf of America’ বলতে রাজি হয়নি।

ট্রাম্প আরও দাবি করেন, তার সময়ে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের সংখ্যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছিল। তবে, তথ্য-বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই পরিসংখ্যানের সম্পূর্ণ চিত্র পেতে হলে ২০০০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

২০০০ সালের আগের ডেটা বার্ষিক ভিত্তিতে সংগ্রহ করা হতো। যদি বার্ষিক ডেটাকে ১২ দিয়ে ভাগ করে গড় মাসিক হিসাব করা হয়, তাহলে দেখা যায়, ১৯৬১ থেকে ১৯৬৮ সালের মধ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশের মাসিক গড় সংখ্যা ছিল ৬,১০০ এর কম।

ভোক্তাদের জন্য উদ্বেগের একটি বিষয় হলো ডিমের দাম। ট্রাম্প দাবি করেন, তার সময়ে ডিমের দাম ৮৭ শতাংশ কমে গিয়েছিল। যদিও পাইকারি বাজারে দাম কমেছিল, তবে খুচরা বাজারে এর প্রভাব সেভাবে পড়েনি।

বাইডেন প্রশাসনের সময় বার্ড ফ্লুর কারণে এক কোটির বেশি ডিম উৎপাদনকারী মুরগি মারা যায়। ফলে ডিমের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে যায়। সেই দাম এখনো ভোক্তাদের ভোগাচ্ছে।

মিশিগানে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বিভিন্ন রাজ্যে গ্যাসের দাম প্রতি গ্যালনে ১.৯৮ ডলার বলছেন। কিন্তু তথ্য বলছে, ঘটনাটি সঠিক নয়।

এপ্রিল মাসের হিসাব অনুযায়ী, সবচেয়ে কম দাম ছিল প্রতি গ্যালনে ২.৬৬ ডলার। এমনকি, গ্যাস স্টেশনগুলোতেও এই দামে গ্যাস পাওয়া যায়নি।

ট্রাম্পের প্রশাসন বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি খরচ কমানোর কথা বললেও, কত বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়েছে, তার সঠিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সরকারি দক্ষতা বিভাগ (Department of Government Efficiency) জানিয়েছে, তারা ১৬০ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করেছে।

তবে, এই হিসাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে একটি অলাভজনক সংস্থা জানায়, সরকারি কর্মীদের বেতন এবং অন্যান্য খাতে পরিবর্তনের ফলে প্রায় ১৩৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।

করনীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প দাবি করেন, ডেমোক্র্যাটরা কর বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে। যদিও ট্রাম্পের এই দাবি আংশিকভাবে সত্য। যদি ট্রাম্পের ২০১৭ সালের কর হ্রাসের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তাহলে করদাতাদের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।

তবে, ডেমোক্র্যাটরা এখনো পর্যন্ত ৪ লক্ষ ডলারের কম আয় করা পরিবারের জন্য ট্রাম্পের কর হ্রাসের বিরোধিতা করেননি।

ট্রাম্পের ভাষণে কর্মক্ষেত্র এবং কর্মীদের নিয়েও কথা হয়। তিনি বলেন, এই সময়ে দেশটির অনেক কিছুই যেন এলোমেলো হয়ে গেছে। হোয়াইট হাউজের তথ্য অনুযায়ী, দূর থেকে কাজ করা কর্মীদের মধ্যে শ্বেতাঙ্গদের সংখ্যা বেশি এবং তাদের গড় বয়স ৪৩.৫ বছর।

এক্ষেত্রে নারীরা ৫২.৩ শতাংশ এবং পুরুষরা ৪৭.৭ শতাংশ।

ভাষণে ট্রাম্প নিজেকে ‘ভাগ্যবান’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘সৌভাগ্যবশত, বর্তমানে কংগ্রেসে আমাদের ভালো মানুষজন আছেন’। তিনি মিশিগানের কংগ্রেসম্যান জন জেমসের প্রশংসা করেন।

তবে, পরে জানা যায়, তিনি ভুল ব্যক্তি চিহ্নিত করেছেন। মূলত, ডেমোক্রেটিক প্রতিনিধি শ্রী থানেদার ট্রাম্পকে ইমপিচ করার প্রস্তাব করেছিলেন।

ট্রাম্প আরও একটি দাবি করেন, তিনি ‘আমেরিকায় কলম্বাস দিবস’ ফিরিয়ে এনেছেন। তবে, বাইডেন প্রশাসন এখনো পর্যন্ত কলম্বাস দিবসের কোনো পরিবর্তন করেনি।

তথ্যসূত্র: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *