ট্রাম্প ২.০: প্রথম ট্রাম্পের ভুল শুধরে নতুন পথে?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের সম্ভাব্য নীতিগুলো নিয়ে চলছে আলোচনা। অনেকেই বলছেন, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এলে ট্রাম্প সম্ভবত তার আগের অনেক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন।
এমনকি তিনি তার পুরনো অনেক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতেও প্রস্তুত। সম্প্রতি সিএনএন-এর একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন কিছু বিষয়, যা ট্রাম্পের ‘ট্রাম্প ২.০’-এর ধারণা দেয়।
ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জাই পাওয়েলকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে তিনিই পাওয়েলকে এই পদে বসিয়েছিলেন। এমনকি তিনি নাকি এমন একটি চিঠি তৈরি করেছেন যেখানে ফেডারেল রিজার্ভের প্রধানকে বরখাস্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, বাজারের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া, সুপ্রিম কোর্টে নিজের মনোনীত বিচারপতি অ্যামি কোনি ব্যারেটের প্রতিও ট্রাম্পের অসন্তুষ্টি রয়েছে বলে জানা গেছে।
বাণিজ্য নীতিতেও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প তার আগের মেয়াদে মেক্সিকো এবং কানাডার সঙ্গে যে বাণিজ্য চুক্তি (USMCA) করেছিলেন, এখন তিনি সেই দেশগুলোর বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছেন।
অনেকেই এটিকে তার আগের নীতির বিপরীত হিসেবে দেখছেন।
ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং টিকটক-এর মতো বিষয়গুলোতেও ট্রাম্পের অবস্থান আগের চেয়ে ভিন্ন হতে পারে। আগে যেখানে তিনি টিকটক-এর উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পক্ষে ছিলেন, এখন শোনা যাচ্ছে তিনি চান কোনো মার্কিন কোম্পানি যেন এটি কিনে নেয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প সম্ভবত তার আগের মেয়াদের কিছু ভুল শুধরে নিতে চাইছেন। বিশেষ করে, তার উপদেষ্টাদের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তের কারণে তিনি অসন্তুষ্ট ছিলেন।
বাণিজ্য নীতির ক্ষেত্রেও এমন পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
তবে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে, তা নিয়ে অনেকের মনেই উদ্বেগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশ্লেষক জিম সিয়ুতো মনে করেন, এবার ট্রাম্প আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রাসী হতে পারেন এবং উপদেষ্টাদের পরামর্শ কম শুনতে পারেন।
বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তারাও ট্রাম্পের নীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তগুলো হয়তো দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে।
অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ট্রাম্প আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুত বলে মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার জন্য তিনি এবং তার সহযোগীরা আগের চার বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন।
প্রথমবার ক্ষমতায় আসার সময় ট্রাম্পের দল সেভাবে প্রস্তুত ছিল না। তাই অনেক ক্ষেত্রে তিনি হোয়াইট হাউসের রিপাবলিকানদের উপর নির্ভর করেছিলেন। এবার তিনি তার এজেন্ডা বাস্তবায়নে অনেক বেশি তৎপর হতে পারেন।
স্বাস্থ্যখাতেও ট্রাম্পের নীতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরিতে তার আগের মেয়াদের সাফল্যের কথা উল্লেখ করা হলেও, তিনি এবার ভ্যাকসিন-বিরোধী ব্যক্তিকে স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিষয়ক পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন।
সব মিলিয়ে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের নীতিগুলো কেমন হবে, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। তিনি কি তার আগের ভুলগুলো শুধরে নতুন পথে হাঁটবেন, নাকি আগের মতোই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেবেন – সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন