যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী এশীয়-আমেরিকান, হাওয়াইয়ান এবং প্যাসিফিক আইল্যান্ডার সম্প্রদায়ের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
এএপিআই ডেটা এবং অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-নোরক সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চের যৌথ জরিপে দেখা গেছে, গত ডিসেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের জুলাইয়ে ট্রাম্প সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
জরিপের ফল অনুযায়ী, এশীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের মধ্যে ট্রাম্পকে অপছন্দ করেন এমন মানুষের সংখ্যা ডিসেম্বরের ৬০ শতাংশ থেকে বেড়ে জুলাইয়ে ৭১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষ করে, নিজেদের স্বতন্ত্র হিসেবে পরিচয় দেওয়া ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি বিরূপ মনোভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। এই অংশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পকে ‘খুবই’ বা ‘কিছুটা’ অপছন্দ করেন, যা ডিসেম্বরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।
বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে প্রধান কারণ হলো অর্থনৈতিক উদ্বেগ। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৮০ শতাংশ এএপিআই ভোটার মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে দেবে।
এছাড়াও, মাত্র ৪০ শতাংশ মনে করেন, এই নীতি অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করবে এবং ২০ শতাংশ মনে করেন এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
অর্থনৈতিক উদ্বেগের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। জরিপে অংশ নেওয়া ৬৫ শতাংশ এএপিআই ভোটার মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দা আসার সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে এপ্রিল মাসে সাধারণ আমেরিকানদের মধ্যে এই সংখ্যা ছিল ৫৩ শতাংশ।
হাওয়াইয়ের একজন শিক্ষক মাইকেল ইদা বলেন, “আমার মনে হয়, এমন অনেক বিষয় ঘটছে যা ভালোভাবে চিন্তা করে দেখা হয়নি। এর ফলে অনেক মানুষের ক্ষতি হচ্ছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ হলেও এএপিআই সম্প্রদায় দেশটির রাজনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। গত নির্বাচনে ইংরেজি ভাষায় কথা বলা এশীয় ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন সামান্য বেড়েছে, তবে এটি এখনও খুব বেশি নয়।
অর্থনীতি বিষয়ক উদ্বেগের পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের উচ্চ মূল্য নিয়েও তাদের মধ্যে গভীর দুশ্চিন্তা রয়েছে। হাওয়াইয়ের বাসিন্দা ইদা জানান, দ্বীপ হওয়ায় এখানকার মানুষ সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল।
ফলে দাম বাড়ার আশঙ্কা তাদের মধ্যে বেশি। তিনি বলেন, “এখানে সবকিছু জাহাজ বা বিমানে আসে। আমরা দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাতের ঝুঁকিতে আছি।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে পণ্যের দাম বাড়লে তা শেষ পর্যন্ত আমেরিকানদেরই বহন করতে হবে। সেই কারণে অনেক এএপিআই ভোটারের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি অসন্তুষ্টি বাড়ছে।
এই জরিপটি ২০২১ সালের ৩ থেকে ১১ জুনের মধ্যে ১,১৩০ জন এশীয় আমেরিকান, হাওয়াইয়ান এবং প্যাসিফিক আইল্যান্ডারের উপর চালানো হয়।
অনলাইনে এবং টেলিফোনে ইংরেজি, ম্যান্ডারিন ও ক্যান্টনিজ ভাষায়, ভিয়েতনামি এবং কোরিয়ান ভাষায় তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এতে ত্রুটির মার্জিন ছিল ৪.৭ শতাংশ।
তথ্য সূত্র: এএপিআই ডেটা এবং অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-নোরক সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ