যুক্তরাষ্ট্রের কারা বিভাগে কর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা, বাড়ছে সংকট।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কারাগারগুলোতে কর্মী নিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দেশটির সরকার অর্থ সাশ্রয়ের উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ নিয়েছে। কর্মকর্তাদের ধারণা, এতে বিদ্যমান জনবল সংকট আরও বাড়বে। দীর্ঘদিন ধরে কারাগারের কর্মী স্বল্পতা একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে, যেখানে কর্মীদের অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হচ্ছে এবং কারারক্ষীদের পাশাপাশি শিক্ষক, নার্স ও অন্যান্য কর্মীদেরও বন্দীদের দেখাশোনার কাজে লাগানো হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের অধীনে থাকা এই কারা বিভাগের পরিচালক উইলিয়াম কে. মার্শাল এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। যদিও কিছু শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, এটি মূলত কর্মী নিয়োগের ওপর একটি ‘পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞা’। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, কিছু জরুরি পদে লোক নিয়োগ দেওয়া হবে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান অর্থবছরের শেষ সময় পর্যন্ত, অর্থাৎ ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কারাগারের জনবল কাঠামো অপরিবর্তিত রাখা হবে। তবে কারারক্ষী ও স্বাস্থ্যকর্মী সহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
এই সিদ্ধান্তের কয়েক দিন আগে দেশটির সাবেক কারাগার আলকাট্রাজ পুনরায় চালু করার নির্দেশ দেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সান ফ্রান্সিসকো বে-তে অবস্থিত এই কারাগারটি বর্তমানে একটি জাদুঘর ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি পুনরায় চালু করতে কয়েকশ’ মিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে। যেখানে ফেডারেল কারাগারগুলোতে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের সংস্কার প্রয়োজন।
মার্শাল কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাজেট সমস্যার কারণে এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। তিনি আরও জানান, কর্মীদের কর্মসংস্থান রক্ষা করতে এবং পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এপি’র তথ্যমতে, এই মুহূর্তে কারা বিভাগে ৪ হাজারের বেশি পদ শূন্য রয়েছে। এর আগে কর্মীদের বেতন-ভাতা কমানোর কারণেও কর্মী নিয়োগে সমস্যা হয়েছে। জানা যায়, ব্রুকলিনের একটি কারাগারে কর্মী নিয়োগ বাড়ানোর পরও ১৫০টির বেশি পদ খালি ছিল। সেখানকার একটি সূত্র বলছে, কর্মী নিয়োগের আগে কারাগারটিতে মাত্র ৫৫ শতাংশ কর্মী কাজ করতেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার একটি কারাগারের ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট অ্যারন ম্যাকগ্লোথিন বলেন, ‘আমরা এমনিতেই কর্মী সংকটে ভুগছি। এমন পরিস্থিতিতে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করা হলে তা খুবই উদ্বেগের কারণ হবে।’
জানা যায়, ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প প্রথমে ফেডারেল ব্যুরো অফ প্রিজনস এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত রেখেছিলেন। যদিও এর আগে ২০১৭ সালেও তিনি একবার এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যার ফলে শূন্যপদের সংখ্যা বাড়ে এবং কর্মীদের ওভারটাইম ডিউটি করতে হয়।
এপি’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে কারাগারে কর্মীর অভাব, কর্মীদের দ্বারা বন্দীদের উপর যৌন নিপীড়ন, বিভিন্ন সময়ে বন্দীদের পালিয়ে যাওয়া, সহিংসতা ও অন্যান্য জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া দিতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া, গত ডিসেম্বরে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কর্মীদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের কারণে ক্যালিফোর্নিয়ার ডাবলিন শহরের একটি নারী কারাগার স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, কর্মী সংকট, অবকাঠামোগত সমস্যা এবং বাজেট ঘাটতির কারণে আরও ৬টি কারাগার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।