মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সেমি-অটোমেটিক রাইফেল থেকে গুলি ছোড়ার গতি বাড়ানোর একটি যন্ত্রাংশ বিক্রির অনুমতি দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে।
সমালোচকেরা বলছেন, এই পদক্ষেপের কারণে ব্যাপকহারে গুলি চালানোর ঘটনা (mass shooting) আরও বাড়তে পারে।
সরকার এবং ‘রেয়ার ব্রিড ট্রিগার্স’ নামের একটি বন্দুক প্রস্তুতকারক কোম্পানির মধ্যে হওয়া সমঝোতার অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে, ফেডারেল সরকার এই ধরনের যন্ত্রাংশকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল।
এটিকে তারা ১৯৩৪ সালের জাতীয় বন্দুক আইনের (National Firearms Act) অধীনে মেশিনগানের পর্যায়ে ফেলেছিল। এই আইনের অধীনে, বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মেশিনগান তৈরি করা বা বিক্রি করা কঠিন।
এই সিদ্ধান্তের ফলে, ‘ফোর্সড-রিসেট ট্রিগার্স’ (FRT) নামের যন্ত্রাংশ এখন সেমি-অটোমেটিক রাইফেলগুলিতে ব্যবহার করা যাবে।
এই যন্ত্রাংশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রিগারটিকে পুনরায় সেট করে, যা দ্রুত গুলি ছোড়ার সুবিধা দেয়। সমালোচকদের মতে, এর ফলে বন্দুকধারীরা দ্রুত আরও বেশি গুলি ছুঁড়তে পারবে, যা জননিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।
তবে, এই সিদ্ধান্তের সমর্থনে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে যে, এটি সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীতে দেওয়া অস্ত্র বহনের অধিকারকে সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা বন্ডি এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা মনে করি দ্বিতীয় সংশোধনী কোনো দ্বিতীয় শ্রেণির অধিকার নয়।”
বন্দুক অধিকার সমর্থনকারীরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বন্দুক মালিকদের অধিকার পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
বন্দুক নিয়ন্ত্রণের পক্ষে থাকা বিভিন্ন সংগঠন এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তাদের মতে, এর ফলে “যুদ্ধকালীন অস্ত্রের” মত মারাত্মক অস্ত্রগুলো এখন সাধারণ মানুষের হাতে সহজে চলে আসবে, যা জনসাধারণের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে, বন্দুকের দোকানের মাধ্যমে এই ধরনের যন্ত্রাংশ কেনা আরও সহজ হবে।
তবে, কর্তৃপক্ষের দাবি, এই সমঝোতার শর্ত হিসেবে জননিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে, ‘রেয়ার ব্রিড ট্রিগার্স’ ভবিষ্যতে পিস্তলের জন্য এই ধরনের যন্ত্রাংশ তৈরি করবে না এবং তারা তাদের তৈরি করা যন্ত্রাংশগুলোর নিরাপদ ব্যবহারের প্রচার করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। একদিকে যেমন বন্দুক মালিকদের অধিকারের পক্ষে সমর্থন বাড়ছে, তেমনি বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইনের কড়া সমর্থকরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন।
এখন দেখার বিষয়, এই বিতর্কের জল কতদূর গড়ায় এবং এর ফলস্বরূপ দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন হয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন