৯৭ মিলিয়ন ডলারের গর্ভনিরোধক ধ্বংসের পথে? ট্রাম্প প্রশাসনের চাঞ্চল্যকর সিদ্ধান্ত!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংরক্ষিত প্রায় এক কোটি ডলার মূল্যের জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন এই বিপুল পরিমাণ গর্ভনিরোধক সরবরাহ বিতরণ না করে, বেলজিয়ামের গুদামঘরে আটকে রেখেছে।

এই পদক্ষেপের কারণে উন্নয়ন সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কারণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কারণে এই মূল্যবান সামগ্রী হয়তো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

জানা গেছে, এই গর্ভনিরোধক সামগ্রীগুলো মূলত যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি)-র মাধ্যমে বাইডেন প্রশাসনের সময় বিভিন্ন আফ্রিকান দেশে বিতরণের জন্য কেনা হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশি সহায়তা কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়ায় বর্তমানে সেগুলো বেলজিয়ামের গুদামঘরেই পড়ে আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, তারা বেলজিয়ামে থাকা এই সামগ্রীগুলো ধ্বংস করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ডলার খরচ হতো।

তবে, বেলজিয়ামের ফ্ল্যান্ডার্সে এই ধরনের পুনরায় ব্যবহারযোগ্য চিকিৎসা সরঞ্জাম পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

সংবাদ সংস্থা সিএনএন-এর সঙ্গে কথা বলার সময়, যুক্তরাষ্ট্রের একজন কংগ্রেসম্যানের সহযোগী জানান, এই জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর মধ্যে প্রধানত ছিল দীর্ঘমেয়াদী গর্ভনিরোধক পদ্ধতি, যেমন— ইন্ট্রাইউটেরাইন ডিভাইস (আইইউডি)। গুদামঘরের মজুদের বিস্তারিত তথ্য অনুযায়ী, এতে ছিল কপার আইইউডি, হরমোনযুক্ত ইমপ্লান্ট, ইনজেকশনযোগ্য জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি এবং লেভোনারজেস্টেরল ও ইথিনাইল এস্ট্রাডিওল ট্যাবলেট।

উক্ত তালিকায় থাকা প্রায় ৫০ লক্ষ পণ্যের মধ্যে বেশিরভাগের মেয়াদ ২০২৮ বা ২০২৯ সাল পর্যন্ত, আর কিছু পণ্যের মেয়াদ রয়েছে ২০২৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত।

বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর, তানজানিয়া, মালি, কেনিয়া ও অন্যান্য দেশের নারীদের কাছে এই সরবরাহ পৌঁছে দেওয়ার জন্য সাহায্যকর্মীরা ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি, তারা জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ), ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যানড প্যারেন্টহুড ফেডারেশন (আইপিপিএফ) এবং এমএসআই রিপ্রোডাক্টিভ চয়েস-এর মতো সংস্থার কাছে বিক্রি করারও প্রস্তাব দেয়।

কিন্তু মার্কিন সরকার তাদের কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।

বর্তমানে সাহায্যকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে যাতে এগুলো ব্যবহার করা না যায়, সেই উদ্দেশ্যে হয়তো সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বেলজিয়ামের গুদামঘরে ফেলে রেখেছে।

আইপিপিএফ-এর সরবরাহ শৃঙ্খল বিভাগের প্রধান মার্সেল ভ্যান ভ্যালেন জানান, “যেসব দেশে এই সামগ্রী পাঠানোর কথা, যেমন তানজানিয়া, মালাউই, বাংলাদেশ, ডিআর কঙ্গো, কেনিয়া— তাদের আমদানি নীতি অনুযায়ী, ওষুধের মেয়াদ নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি থাকতে হয়।

উদাহরণস্বরূপ, তানজানিয়ায় এই ধরনের দীর্ঘমেয়াদী পণ্যের ক্ষেত্রে, মেয়াদ যদি ৬০ শতাংশের কম থাকে, তবে তা আমদানি করা যায় না।”

তিনি আরও যোগ করেন, “যদি দ্রুত কোনো সমাধান না পাওয়া যায়, তবে মার্কিন সরকার হয়তো এই সুযোগ নেবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে, তারা হয়তো আমদানি বিধি লঙ্ঘনের অজুহাতে এগুলো ধ্বংস করে দেবে।”

বিষয়টি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সিএনএন-এর প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি।

তানজানিয়ায় আইপিপিএফ-এর সদস্য সংস্থা উমাতির প্রকল্প সমন্বয়কারী ড. বাকারি ওমারি বলেন, “এই মুহূর্তে আমাদের কাছে পর্যাপ্ত সম্পদ নেই।

এই জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীগুলো তানজানিয়ার বার্ষিক চাহিদার ২৮ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম। এগুলো না থাকার কারণে সেখানকার নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার সুযোগ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

গর্ভনিরোধক সামগ্রীর অভাবের পাশাপাশি, তানজানিয়ায় পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে ইউএসএআইডি-র সহায়তা কমানো হয়েছে।

ড. ওমারি জানান, তহবিল কমানোর ফলে কিছু কর্মসূচির আকার ছোট হয়ে গেছে এবং স্বাস্থ্যকর্মীদেরও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁর আশঙ্কা, এর ফলে অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণ ও অনিরাপদ গর্ভপাতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকে ‘গর্ভপাত ঘটায়’ এমন বিতর্কিত তকমা দেওয়ার কারণেও জটিলতা তৈরি হয়েছে।

আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ান্স অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টস (এসিওজি) জানিয়েছে, “গর্ভনিরোধক কখনোই গর্ভপাত ঘটায় না। আইইউডি বা অন্য কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে, গর্ভপাতের কারণ হয় না।”

বেলজিয়াম সরকার জানিয়েছে, তারা এই সামগ্রী ধ্বংস করা থেকে বিরত রাখতে কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করছে।

ইউএনএফপিএ জানিয়েছে, তারা এই সরবরাহ কিনতে প্রস্তুত।

তারা আরও জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতে তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করলেও, চুক্তিকারী সংস্থা কেমোনিক্স কয়েক সপ্তাহ পর তাদের আর কোনো জবাব দেয়নি।

ইউএনএফপিএ আরও জানায়, “গর্ভনিরোধক জীবন বাঁচায়। সারা বিশ্বে ২৫ কোটির বেশি নারী গর্ভধারণ করতে চান না, কিন্তু তাঁদের পরিবার পরিকল্পনার সুযোগ নেই।

এই চাহিদা পূরণ করা গেলে মাতৃমৃত্যু প্রায় ২৫ শতাংশ কমানো সম্ভব।”

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *