যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি: বিতর্কিত প্রমাণ ও বিতর্কের ঝড়
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন প্রত্যাশীদের আটকাতে এবং তাদের বিতাড়িত করতে দুর্বল প্রমাণ ব্যবহার করছে— এমন অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি কিছু ঘটনায় এর প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা মানবাধিকার এবং যথাযথ বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি চরম অবজ্ঞা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অভিযোগগুলি উঠেছে মূলত কয়েকটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।
উদাহরণস্বরূপ, ত্রুটিপূর্ণ প্রমাণ ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলার প্রায় দুই শতাধিক নাগরিককে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়। তাদের বিরুদ্ধে গ্যাং সদস্যতার অভিযোগ আনা হলেও, তাদের শরীরে থাকা ট্যাটুকে (tattoo) এই অভিযোগের ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও, ফিলিস্তিনিপন্থী এক অ্যাক্টিভিস্টকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক করা হয়েছে, যিনি গ্রিন কার্ডধারী ছিলেন। এমনকি, ভিসা নিয়ে আসা একজন ডাক্তারকে লেবাননে ফেরত পাঠানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে।
অভিযোগ উঠেছে, অভিবাসন বিষয়ক শুনানিতে অভিযুক্তদের জন্য ন্যায্য বিচার পাওয়ার সুযোগ সীমিত করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নাগরিক অধিকার আরও দুর্বল হয়েছে।
তাদের মতে, দুর্বল প্রমাণ ব্যবহার করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং অভিযুক্তদের নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য এসব অভিযোগের বিরোধিতা করা হয়েছে। তাদের দাবি, অভিবাসীদের বিতাড়নের কারণ হলো জাতীয় নিরাপত্তা।
সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, বিতাড়িত করার আগে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্যাং সদস্যতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আসুন, বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা কয়েকটি ঘটনার দিকে নজর দেওয়া যাক:
- ট্যাটু বিষয়ক প্রমাণ: এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ক্ষেত্রে, তাদের ট্যাটুকে গ্যাং সদস্যতার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, এই ট্যাটুগুলো অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িত থাকার ইঙ্গিত দেয়।
তবে, ভুক্তভোগীদের অনেকেই জানিয়েছেন, তাদের ট্যাটুগুলো সাধারণ এবং এর সঙ্গে কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রমের সম্পর্ক নেই।
- ফ্লাইয়ার ও ‘মিথ্যা তথ্য’ বিষয়ক প্রমাণ: কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে একজন ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্টকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি হামাসের সমর্থনে প্রচারপত্র বিলি করেছেন। এছাড়াও, তিনি গ্রিন কার্ড পাওয়ার সময় তার অতীতের কিছু কাজের তথ্য গোপন করেছেন।
- মুছে ফেলা ছবি বিষয়ক প্রমাণ: একজন ডাক্তারকে তার মোবাইল ফোনে হিজবুল্লাহ নেতা ও ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ছবি পাওয়ার পর লেবাননে ফেরত পাঠানো হয়। কর্তৃপক্ষের দাবি, তিনি হিজবুল্লাহর প্রতি সমর্থন জানান, যদিও তিনি তা অস্বীকার করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের এসব পদক্ষেপ মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের প্রতি সম্মান দেখাচ্ছে না বলে মনে করেন অনেকে। তারা বলছেন, দুর্বল প্রমাণ ব্যবহার করে মানুষকে বিতাড়িত করার প্রবণতা অভিবাসন আইনের দুর্বলতাকে আরও প্রকট করে তুলছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন