মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া কি ঝুঁকিপূর্ণ? বিদেশী শিক্ষার্থীদের উপর ট্রাম্প প্রশাসনের কোপ!

যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপর ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রভাব: বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্বেগের কারণ?

শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত নিতে যাওয়া কয়েক লক্ষ শিক্ষার্থীর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলেজগুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের কিছু নীতির কারণে ভিসা বাতিল এবং কলেজগুলোর উপর ফেডারেল অর্থায়ন বন্ধের হুমকির ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কলেজগুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে। গত শিক্ষাবর্ষে, ১১ লক্ষেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করেছে। এই শিক্ষার্থীরা সাধারণত আমেরিকান শিক্ষার্থীদের তুলনায় বেশি টিউশন ফি পরিশোধ করে, যা কলেজগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস। কিন্তু ভিসা বাতিল এবং অন্যান্য কড়াকড়ির কারণে যদি বিদেশি শিক্ষার্থীরা অন্য কোনো দেশে পাড়ি জমায়, তবে তা মার্কিন কলেজগুলোর আর্থিক অবস্থার উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে।

বিভিন্ন কারণে অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে এখন যুক্তরাষ্ট্রে আসার বিষয়ে দ্বিধা দেখা যাচ্ছে। এমনকি কলেজ ভর্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগেই, আবেদন প্রক্রিয়াকরণকারী একটি সংস্থা জানিয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবেদন কিছুটা কমেছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে চীনের সতর্কতা। চীন, যারা বিদেশি শিক্ষার্থী প্রেরণে শীর্ষস্থানীয়, তাদের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে বলেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ১ হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত, আবার কারো বিরুদ্ধে সামান্য অপরাধের অভিযোগ ছিল। ভিসা বাতিল হলে শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রের আইনগত অধিকার শেষ হয়ে যায়, যার ফলে তাদের পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে যায়।

সাধারণত, বিদেশি শিক্ষার্থীরা ফেডারেল আর্থিক সহায়তার জন্য যোগ্য নয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব আর্থিক সহায়তাও সীমিত করে থাকে। তাই, বিদেশি শিক্ষার্থীরা স্থানীয় শিক্ষার্থীদের তুলনায় বেশি অর্থ প্রদান করে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতে, তাদের মূল মনোযোগ থাকা উচিত স্থানীয় শিক্ষার্থীদের উপর, কারণ তাদের পরিবার কর প্রদান করে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও ভালো মানের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। ক্রমবর্ধমান টিউশন ফি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভালো মানের কারণে, অনেক শিক্ষার্থী এখন অন্যান্য দেশের দিকে ঝুঁকছে। কানাডার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এরই মধ্যে আমেরিকান শিক্ষার্থীদের আবেদন বেড়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রতি বছর বহু সংখ্যক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায়। তাদের ভিসা এবং আর্থিক নিরাপত্তা এখন একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।

যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আগমন কমে গেলে, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে। কারণ, এর ফলে একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার সুযোগ কমে আসবে, তেমনি সেখানকার জীবনযাত্রাও কঠিন হয়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদেরও এখন নতুন করে ভাবতে হচ্ছে, তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার জন্য কোন গন্তব্য ভালো হবে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *