মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে গঠিত একটি বিশেষ টাস্কফোর্স নিয়ে বর্তমানে বিতর্ক চলছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নেওয়া এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ খতিয়ে দেখা। তবে, এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে বিচার বিভাগের নেতৃত্বে, যার প্রধান হিসেবে রয়েছেন সাবেক ‘ফক্স নিউজ’ ব্যক্তিত্ব এবং মানবাধিকার আইনজীবী লিও টরেল। তার সঙ্গে রয়েছেন ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা স্টিফেন মিলারসহ আরও অনেকে। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, গত ফেব্রুয়ারিতে জারি করা এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে ক্যাম্পাসগুলোতে ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
কিন্তু অ্যান্টি-ডিফেমেশন লীগ (Anti-Defamation League) এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হিলেল ছাত্র সংগঠনসহ বেশ কিছু প্রভাবশালী ইহুদি সংগঠন এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর এমন আক্রমণ উদ্বেগের বিষয়। এই টাস্কফোর্সের প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রভাব ফেলছে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষমতা ও প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়।
ইতিমধ্যে, টাস্কফোর্স হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গাবারকে নীতি পরিবর্তনের জন্য চিঠি দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এর কয়েক দিন পর, ফেডারেল টাস্কফোর্স হার্ভার্ডের জন্য ২.২ বিলিয়ন ডলারের তহবিল স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এই ঘটনায় শিক্ষাগত স্বাধীনতা, ফেডারেল তহবিল এবং ক্যাম্পাস তদারকি নিয়ে বড় ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
তবে, প্রশাসন হার্ভার্ডের সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসার ইঙ্গিত দিয়েছে। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ফেডারেল তহবিলের বিষয়ে আলোচনাকে ট্রাম্পের শুল্ক নীতির সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা আলোচনার বিষয় হতে পারে।
এই টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে রয়েছেন লিও টরেল, যিনি বিচার বিভাগের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের সিনিয়র কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া, এই দলে ফেডারেল অ্যাকুইজিশন সার্ভিসের কমিশনার জশ গ্রেনবাম, স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত জেনারেল কাউন্সেল শন কেভেনি এবং বিচার বিভাগের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হারমিত ধিলনও রয়েছেন।
হোয়াইট হাউসের তথ্য অনুযায়ী, টাস্কফোর্স প্রতি সপ্তাহে বৈঠকে বসে এবং এতে বিচার বিভাগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা, স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা, ট্রেজারি এবং জিএসএ-এর প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তবে, হোয়াইট হাউস তাদের সদস্যদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে রাজি হয়নি।
হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার এবং অভ্যন্তরীণ নীতি বিষয়ক অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা এই উদ্যোগের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন সিনিয়র পলিসি কৌশলবিদ মে মেইলম্যান এবং ডমেস্টিক পলিসি কাউন্সিলের পরিচালক ভিন্স হ্যালি।
লিও টরেল, যিনি এক সময়ের ডেমোক্রেট ছিলেন, ২০২০ সালে ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার ঘোষণা দেন এবং তাকে বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি তার লক্ষ্যের কথা স্পষ্ট করে বলেছেন, “আমরা ইহুদি বিদ্বেষের সঙ্গে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে মামলা করব এবং তাদের অর্থ বন্ধ করে দেব।”
এই টাস্কফোর্স হার্ভার্ড ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকেও নজর রাখছে। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার মতে, এটি টাস্কফোর্সের প্রাথমিক পদক্ষেপ এবং তারা আশা করছে, অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই ধরনের বৈষম্য বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গাবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি। তিনি উল্লেখ করেন, যদিও ইহুদি বিদ্বেষ একটি গুরুতর সমস্যা, তবে এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার কোনো সম্পর্ক নেই।
হোয়াইট হাউসের ধারণা, দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা একটি সফল রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে। ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের কারণে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে হওয়া প্রতিবাদ এই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। লিও টরেল আরও বলেছেন, উচ্চ শিক্ষার বাইরেও এই কার্যক্রম চলবে, বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতেও নজর রাখা হবে।
হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রশাসন গত সপ্তাহে তিনবার যোগাযোগ করেছে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এতে আগ্রহ দেখায়নি। হোয়াইট হাউসের আশা, হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন