মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন কর্মকর্তাদের মুখোশ পরে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি বর্তমানে বেশ উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে অভিবাসন নীতির কড়াকড়ির অংশ হিসেবে প্রায়ই তাদের এভাবে দেখা যাচ্ছে।
এই বিষয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউ ইয়র্ক সিটির কন্ট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার সম্প্রতি ম্যানহাটনের একটি ইমিগ্রেশন আদালতে যান। সেখানে তিনি দেখেন, মুখোশ পরিহিত কয়েকজন ফেডারেল এজেন্ট কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই কয়েকজন অভিবাসীকে তাদের সঙ্গীদের কাছ থেকে আলাদা করে নিয়ে যাচ্ছেন। ল্যান্ডারের মতে, এই প্রক্রিয়াটি “গভীরভাবে অমানবিক”।
আগে কর্মকর্তাদের এমনভাবে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি দেখা যেত না। কিন্তু বর্তমানে আদালতের বাইরে, ট্রাফিক স্টপে এবং কর্মক্ষেত্রে অভিযান চালানোর সময় প্রায়ই কর্মকর্তাদের মুখোশ পরে দেখা যাচ্ছে। অনেক সময় তাদের পোশাকেও কোনো ভিন্নতা থাকে না, এমনকি কোনো ব্যাজও দেখা যায় না।
বারাক ওবামার আমলে ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বিভাগের (আইস) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জন স্যান্ডওয়েগ জানিয়েছেন, তার কর্মজীবনে এমন ঘটনা দেখেননি। তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি, তবে এখন যা হচ্ছে তা কোনো যুক্তিসঙ্গত নীতির আওতায় পড়ে না। এটা ব্যতিক্রম হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত, কিন্তু বর্তমানে তা নিয়মে পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে, আইসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড লিয়ন্স জানিয়েছেন, কর্মকর্তাদের পরিবারকে হয়রানি থেকে বাঁচাতে তারা মুখোশ ব্যবহার করছেন। তিনি আরও বলেন, অভিবাসন নীতি নিয়ে মানুষের অপছন্দ থাকলেও, কর্মকর্তাদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে কোনো কাজ করা হবে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন কর্মকর্তাদের এমন আচরণ নতুন নয়। তথাকথিত ফিলিস্তিনিপন্থী শিক্ষার্থী এবং ইসরায়েলের নীতির সমালোচকদের লক্ষ্য করে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযানের অংশ হিসেবে, কর্মকর্তাদের সাদা পোশাকে এবং পরিচয় গোপন করে শিক্ষার্থী ও তাদের বাড়ির কাছে আটক করতে দেখা গেছে।
এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাইডেন প্রশাসনের একজন সিনিয়র আইস কর্মকর্তা স্কট শুকার্ট বলেছেন, কর্মকর্তাদের কোনো পরিচয় না জানানোটা খুবই উদ্বেগের। তার মতে, এটা খুবই বিপজ্জনক।
এই পরিস্থিতিতে অনেক সমালোচক প্রশ্ন তুলেছেন, বিক্ষোভকারীদের মুখোশ পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও, অভিবাসন কর্মকর্তাদের কেন এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে?
এমনকি, সম্প্রতি মিনেসোটা রাজ্যের আইনপ্রণেতাদের ওপর হামলার ঘটনার পরে অনেকেই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। যেখানে একজন ব্যক্তি পুলিশের পোশাক পরে এসে হামলা চালায়, সেখানে মুখোশ পরিহিত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার আইনপ্রণেতারা একটি বিল উত্থাপন করেছেন, যেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মক্ষেত্রে মুখ ঢেকে কাজ করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতা স্টিফেন লিঞ্চ এই ধরনের কার্যক্রমকে নাৎসি জার্মানির গেস্টাপোর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, “যখন আপনি গেস্টাপোকে পোল্যান্ডের রাস্তা থেকে লোকজনকে তুলে নিয়ে যেতে দেখবেন, তখন এই ধরনের কর্মকর্তাদের দেখলে একই রকম মনে হবে।”
ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আইস-এর মূল লক্ষ্য ছিল গণহারে বিতাড়ন করা। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিবাসন নীতির কঠোরতা প্রচার করা হয়েছে, তবে কর্মকর্তাদের ওপর গ্রেপ্তারি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার জন্য চাপ ছিল।
সাবেক আইস কর্মকর্তা কেভিন ল্যান্ডি বলেছেন, “সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অভিবাসন কর্মকর্তাদের কাজ করার ধরনও পাল্টে যায়। উদারপন্থী সরকার তাদের অপরাধী গ্রেপ্তারের কথা বলে, আবার রিপাবলিকানরা ক্ষমতায় এলে তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করতে বলা হয়।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন