মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিতর্কের ঝড়: গ্রিন কার্ড আবেদনে তথ্য গোপনের অভিযোগে মাহমুদ খলিল!

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের হেফাজতে থাকা ফিলিস্তিনিপন্থী কর্মী মাহমুদ খলিলের বিরুদ্ধে এবার গ্রিন কার্ড আবেদনে তথ্য গোপনের অভিযোগ এনেছে ট্রাম্প প্রশাসন। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্নাতকের বিরুদ্ধে এর আগে হামাস-এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হলেও, তার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি তারা।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মাহমুদ খলিল তার গ্রিন কার্ডের আবেদনে যুক্তরাজ্যের বৈরুতস্থ দূতাবাসে কাজ করা এবং জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থায় (ইউএনআরডব্লিউএ) সদস্য থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেননি। এই ইউএনআরডব্লিউএ-কে ইসরায়েলি এবং মার্কিন রাজনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরে ইহুদিবিদ্বেষী হিসেবে অভিযুক্ত করে আসছেন।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মাহমুদ খলিল ‘প্রতারণার মাধ্যমে’ অভিবাসন সুবিধা পেতে চেয়েছিলেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “রাজনৈতিক বক্তব্য সম্পর্কিত অভিযোগ নির্বিশেষে, খলিল কিছু সংস্থার সদস্যপদ গোপন করেছেন।”

গত বসন্তে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের বিরুদ্ধে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে, ৮ মার্চ মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকেই তিনি ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’-এর (আইসিই) হেফাজতে রয়েছেন। ওবামা-প্রশাসনে নিযুক্ত বিচারক জেসি ফুরম্যান খলিলকে এখনই দেশ থেকে বহিষ্কারের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন এবং মামলাটি অন্য আদালতে স্থানান্তরিত করেছেন।

শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসন খলিলকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে অভিহিত করে। তাদের দাবি, খলিলের উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘মারাত্মক’ পররাষ্ট্রনৈতিক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তবে, কিভাবে খলিল কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, অভিবাসন নীতি কঠোর করার অংশ হিসেবে, ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য বিদেশি শিক্ষাবিদদেরও চিহ্নিত করছে।

মাহমুদ খলিলের আইনজীবীরা নতুন এই অভিযোগকে দুর্বল বলে দাবি করেছেন। তাদের মতে, প্রথম অভিযোগটি টেকে না বলেই এমনটা করা হচ্ছে। খলিলকে ‘রাজনৈতিক বন্দী’ হিসেবে উল্লেখ করে তার আইনজীবীরা আদালতের কাছে দ্রুত তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন করেছেন।

অন্যদিকে, ইউএনআরডব্লিউএ দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত একটি বিষয়। সংস্থাটি ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং আশ্রয় প্রদানের কাজ করে থাকে। তবে, এর বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ রয়েছে। ইসরায়েল এই সংস্থাকে তাদের দেশে কাজ করতে দিতে রাজি নয়। এমনকি, তারা ইউএনআরডব্লিউএ-কে হামাসের সঙ্গে যুক্ত বলেও অভিযোগ করে।

ইউএনআরডব্লিউএ-এর কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারি‌নি বলেছেন, ইউএনআরডব্লিউএ-কে ভেঙে দিলে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের দুর্দশা আরও বাড়বে।

মাহমুদ খলিল আলজেরিয়ার নাগরিক। তিনি সিরিয়ার একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে বড় হয়েছেন। তাকে আটকের পর, আদালত থেকে এক হাজার মাইলেরও বেশি দূরে, লুইসিয়ানার একটি আইসিই প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তার আইনজীবীরা তাকে আদালতের কাছাকাছি কোনো কেন্দ্রে সরানোর জন্য আবেদন করেছেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *