ট্রাম্প প্রশাসনের গোপন যুদ্ধ পরিকল্পনা: আটলান্টিকের হাতে!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের গোপন সামরিক পরিকল্পনার তথ্য ফাঁস হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, আটলান্টিক ম্যাগাজিনের সম্পাদক-ইন-চিফ জেফরি গোল্ডবার্গকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি গোপন সামাজিক মাধ্যম চ্যাট গ্রুপে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছিল।

ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন গোল্ডবার্গ সিগন্যাল নামক একটি এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপে “মাইকেল ওয়াল্টজ” নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে একটি মেসেজ পান। প্রথমে তিনি ওয়াল্টজের পরিচয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন, কারণ ওয়াল্টজ ছিলেন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।

তবে পরে তিনি দেখেন যে, এই চ্যাট গ্রুপে প্রায় ১৮ জন সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন, যাদের মধ্যে স্টেট সেক্রেটারি মার্কো রুবিও, ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স এবং প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও ছিলেন।

গোল্ডবার্গ তার এক নিবন্ধে লিখেছেন, “আমি এমন নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনা আগে দেখিনি।” তিনি দ্রুত হোয়াইট হাউসকে এই বিষয়ে অবহিত করেন এবং নিজে গ্রুপটি ত্যাগ করেন।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এক বিবৃতিতে এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, কিভাবে একজন অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি এই চ্যাট গ্রুপে যুক্ত হলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অন্যদিকে, এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এবং বিস্তারিত জানার জন্য সাংবাদিকদের হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

ঘটনা প্রসঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। এমনকি তিনি আটলান্টিক ম্যাগাজিন সম্পর্কেও বিরূপ মন্তব্য করেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে জানতে চান, ঠিক কী নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল।

ডেমোক্রেট সিনেটর ক্রিস কুনস সহ অনেকে এই ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। সিনেটর কুনস বলেছেন, “আটলান্টিকে প্রকাশিত জেফরি গোল্ডবার্গের প্রতিবেদন একটি দ্রুত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের দাবি রাখে।

তিনি আরও বলেন, “যদি ট্রাম্প প্রশাসনের সিনিয়র উপদেষ্টারা বিস্তারিত যুদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করার জন্য অনিরাপদ, সরকারি-বহির্ভূত সিস্টেম ব্যবহার করেন, তবে এটি শ্রেণীবদ্ধ তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে একটি মারাত্মক লঙ্ঘন, যা আমেরিকান সেনা সদস্যদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।”

গোল্ডবার্গের মতে, তিনি যখন এই চ্যাট গ্রুপের সদস্য ছিলেন, তখন সেখানে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছিল। এই আলোচনার মধ্যে ছিল আক্রমণের সময় এবং এর কারণসহ বিভিন্ন বিষয়।

এমনকি হামলার ফলে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মধ্যে সম্ভাব্য সুবিধার বিভাজন নিয়েও কর্মকর্তাদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়।

গোল্ডবার্গ তার নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স হুতিদের বিরুদ্ধে হামলার ফলে ইউরোপীয় বাণিজ্য বেশি উপকৃত হবে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বোমা হামলা বিলম্বিত করার প্রস্তাব দেন।

তবে প্রতিরক্ষা সচিব হেগসেথ এর সঙ্গে একমত ছিলেন না। তিনি বলেছিলেন, বিলম্ব হলে তা ঝুঁকি বাড়াবে।

এই ঘটনার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের এমন সংবেদনশীল সামরিক বিষয় নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা করা কতটা বৈধ। গোল্ডবার্গ উল্লেখ করেছেন, “জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সিগন্যালে যোগাযোগ করেন, তবে এই অ্যাপটি মূলত মিটিং পরিকল্পনা এবং অন্যান্য লজিস্টিক্যাল কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়, বিস্তারিত এবং অতি গোপনীয় সামরিক আলোচনার জন্য নয়।”

আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা যদি তাদের ফোন হারাতেন বা চুরি হয়ে যেত, তাহলে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি হতে পারত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এই ঘটনার জেরে এখন তদন্তের প্রস্তুতি চলছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *