যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন কিছু সাংবাদিকের ইমেইল স্বাক্ষরে ব্যবহৃত সর্বনামের (pronoun) প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। তাঁদের মতে, সাংবাদিকদের এই ধরনের আচরণ ‘লিঙ্গগত আদর্শের’ প্রতি সমর্থন জানায়।
ফলে, ওই ধরনের সর্বনাম ব্যবহার করা সাংবাদিকদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করতে রাজি হননি।
বিভিন্ন ইমেইল স্বাক্ষরে এখন অনেক তথ্য থাকে, যেমন – ফোন নম্বর, ঠিকানা এবং সামাজিক মাধ্যমের আইডি। এর বাইরে, আজকাল অনেক সাংবাদিক তাঁদের ইমেইল স্বাক্ষরে সর্বনাম ব্যবহার করেন।
এর মাধ্যমে তাঁরা বোঝাতে চান যে তাঁরা নারী, পুরুষ নাকি অন্য কোনো লিঙ্গের অন্তর্ভুক্ত।
এই ধারণার সঙ্গে একমত ছিলেন না তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসনের সদস্যরা। তাঁদের মতে, মানুষ কেবল দুটি জৈবিক লিঙ্গের অন্তর্ভুক্ত – পুরুষ এবং নারী।
এমনকি, ফেডারেল কর্মচারীদেরও ইমেইল স্বাক্ষর থেকে তাঁদের সর্বনাম সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছিল।
বিষয়টি শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং গণমাধ্যমকর্মীদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের মনোভাব দেখা গেছে।
একাধিক সাংবাদিকের সূত্রে জানা যায়, প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেই সব সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করতে রাজি হননি, যাঁরা তাঁদের ইমেইল স্বাক্ষরে সর্বনাম উল্লেখ করেছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাঁদের দুজন সাংবাদিক এবং অন্য একটি গণমাধ্যমের একজন সাংবাদিকের ইমেইল প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি।
কারণ হিসেবে তাঁরা জানান, সাংবাদিকদের ইমেইল স্বাক্ষরে সর্বনাম ব্যবহারের কারণে তাঁরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চান না। হোয়াইট হাউসের তৎকালীন প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, “আমাদের নীতি হলো, আমরা সেই সব সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিই না, যাঁরা তাঁদের পরিচিতিতে সর্বনাম ব্যবহার করেন।”
যদিও, এটি প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক নীতি ছিল কিনা, তা স্পষ্ট নয়। ক্যারোলিন লেভিট এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে ক্যারোলিন লেভিট আরও বলেন, “যেসব সাংবাদিক তাঁদের পরিচিতিতে নিজেদের পছন্দের সর্বনাম ব্যবহার করেন, তাঁরা সম্ভবত জৈবিক বাস্তবতা বা সত্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন।
তাই তাঁদের কাছ থেকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ আশা করা যায় না।”
ইমেইল স্বাক্ষর যে মতাদর্শগত বিতর্কের কারণ হতে পারে, তা সম্ভবত খুব একটা আশ্চর্যের বিষয় নয়। স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ ভাষাবিজ্ঞানের অধ্যাপক লরেন হল-লেউ বলেন, ভাষা হলো এক ধরনের ‘সামাজিক সংকেত’।
তিনি আরও বলেন, “ভাষা এবং ভাষার ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক এখন আরও তীব্র এবং রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত, যা বাস্তব রাজনৈতিক পরিস্থিতিরই প্রতিফলন। ভাষা হলো যোগাযোগের মাধ্যম। মানুষ যেহেতু জটিল, তাই ভাষার ব্যবহারও রাজনৈতিক হয়ে ওঠে।”
ইমেইল স্বাক্ষরে সর্বনাম ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আগে এমন একটা সময় ছিল, যখন কেউ ইমেইল স্বাক্ষরে সর্বনাম ব্যবহার করলে, ধরে নেওয়া হতো তিনি রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষ।
তবে এখন সেই ধারণা পাল্টেছে। বর্তমানে, এটি মূলত ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু সম্পর্কিত আপনার রাজনৈতিক অবস্থানকে তুলে ধরে।
এদিকে, সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর সঙ্গেও হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।
এপি-কে হোয়াইট হাউসের কিছু অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। কারণ, সংবাদ সংস্থাটি মেক্সিকো উপসাগরের নামকরণে ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশ অনুসরণ করতে রাজি হয়নি।
২০১৭ সালে ট্রাম্প কর্তৃক মনোনীত মার্কিন জেলা জজ ট্রেভর এন. ম্যাকফ্যাডেন এপির পক্ষে রায় দেন।
তিনি বলেন, সরকার তাদের সম্পাদকীয় সিদ্ধান্তের কারণে প্রতিশোধ নিতে পারে না। হোয়াইট হাউস এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস