মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বরাদ্দকৃত বিশাল অংকের তহবিল ফিরিয়ে নিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। জানা গেছে, স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো থেকে প্রায় ১ হাজার ১৪০ কোটি ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ১ লক্ষ ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি) তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই পদক্ষেপের ফলে জরুরি স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ (Department of Health and Human Services – HHS) জানিয়েছে, তাদের মতে কোভিড-১৯ অতিমারী এখন শেষ হয়ে গেছে।
তাই করদাতাদের অর্থ আর এই অপ্রয়োজনীয় খাতে খরচ করা হবে না। তারা আরও জানিয়েছে, সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে এই অর্থ পুনরুদ্ধার করতে পারবে। গত সোমবার থেকেই এই বিষয়ে নোটিশ পাঠানো শুরু হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই তহবিল মূলত কোভিড-১৯ পরীক্ষা, টিকাদান, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রকল্প, স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তা এবং ঝুঁকিপূর্ণ ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হত।
এর মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষও অন্তর্ভুক্ত ছিল। খবর অনুযায়ী, ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অফ কাউন্টি অ্যান্ড সিটি হেলথ অফিসিয়ালস এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লরি ফ্রিম্যান জানিয়েছেন, এই তহবিলের মেয়াদ খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
এমতাবস্থায় এখন এই অর্থ প্রত্যাহারের কারণ তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। তার মতে, এটা ‘নির্মম ও অস্বাভাবিক আচরণ’।
অন্যদিকে, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (NIH) কর্তৃক অর্থায়িত কোভিড-১৯ সম্পর্কিত গবেষণা প্রকল্পগুলোও বাতিল করা হয়েছে।
এর আগে, ট্রাম্প প্রশাসন বিনামূল্যে কোভিড পরীক্ষার কিট সরবরাহ করার যে সরকারি ওয়েবসাইট covidtest.gov, সেটিও বন্ধ করে দেয়।
যদিও সরকারিভাবে কোভিড-১৯ বিষয়ক জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয়েছে, তবুও ভাইরাসটি এখনো আমেরিকানদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে।
সিডিসি’র তথ্য অনুযায়ী, গত চার সপ্তাহে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় ৪৫৮ জন মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
এইচএইচএস কর্তৃপক্ষ কীভাবে এই তহবিল পুনরুদ্ধার করবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
তবে তাদের মুখপাত্র অ্যান্ড্রু নিক্সন এক ইমেইল বার্তায় জানিয়েছেন, এই অর্থ এখনও বিতরণ করা হয়নি।
লরি ফ্রিম্যান আরও জানান, রাজ্য স্বাস্থ্য বিভাগগুলোর কাছে ইতিমধ্যেই এই অর্থ পৌঁছে গিয়েছিল।
কংগ্রেসের অনুমোদন এবং বরাদ্দের মাধ্যমেই এই তহবিল দেওয়া হয়েছিল, যা রাজ্যগুলো স্থানীয় পর্যায়ে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়।
এই তহবিলের কিছু অংশ অন্যান্য জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা সমাধানেও ব্যবহৃত হত।
ফ্রিম্যানের মতে, কোভিড-১৯ এর সময় বর্জ্য জল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ফ্লু এবং নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছিল।
এমনকি সম্প্রতি হামের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলাতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন এবং এর আগের বাইডেন প্রশাসনের সময়ে কোভিড মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল।
এর মধ্যে কোভিড ত্রাণ বিল এবং আমেরিকান রেসকিউ প্ল্যান অ্যাক্ট উল্লেখযোগ্য।
বর্তমানে, তহবিল প্রত্যাহারের ফলে স্বাস্থ্য বিভাগগুলোর ওপর ঠিক কী প্রভাব পড়বে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
তবে কিছু কিছু বিভাগ এর প্রভাব মূল্যায়ন করতে শুরু করেছে।
উদাহরণস্বরূপ, ওয়াশিংটন রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে যে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত ১২ কোটি ৫০ লক্ষ ডলারেরও বেশি তহবিল তারা তাৎক্ষণিকভাবে হারাতে চলেছেন।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, টিকাদান ও অন্যান্য জরুরি সেবার জন্য তাদের ৮ কোটি ডলারেরও বেশি তহবিল হারাতে হতে পারে।
তাদের মতে, এই অর্থ মূলত রোগ পর্যবেক্ষণ, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক পরীক্ষাগার পরিষেবা, রোগের প্রাদুর্ভাব অনুসন্ধান, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং তথ্য প্রকাশে সহায়তা করে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস