যুক্তরাষ্ট্রের ২৩টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসি’র অ্যাটর্নি জেনারেলগণ সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন-এর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। জনস্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দকৃত প্রায় ১ হাজার ২শ কোটি ডলারের তহবিল বাতিল করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এই মামলা করা হয়েছে।
তাঁদের অভিযোগ, এই পদক্ষেপটি ছিল বেআইনি এবং এর ফলে জনসাধারণের স্বাস্থ্যখাতে মারাত্মক ক্ষতি হবে।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, অঙ্গরাজ্যগুলোর অ্যাটর্নি জেনারেলগণ স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের (Department of Health and Human Services – HHS) এই সিদ্ধান্তের ওপর তাৎক্ষণিক স্থগিতাদেশ চেয়েছেন। একইসঙ্গে, তাঁরা এই তহবিল বাতিলের বিরুদ্ধে একটি নিষেধাজ্ঞাও চেয়েছেন।
তাঁদের মতে, এই অর্থ হ্রাস জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলি বন্ধ করে দেবে এবং হাজার হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর চাকরি চলে যাবে।
জানা গেছে, বাতিল হওয়া এই তহবিলের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ১শ ৪০ কোটি ডলার ছিল রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (Centers for Disease Control and Prevention – CDC) থেকে এবং অবশিষ্ট ১শ কোটি ডলার এসেছে মাদকাসক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রশাসন (Substance Abuse and Mental Health Services Administration – SAMHSA) থেকে।
আবেদনকারীদের যুক্তি হলো, যদিও এই তহবিলগুলো কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে বরাদ্দ করা হয়েছিল, তবে সেগুলোর মূল উদ্দেশ্য শুধু করোনা মোকাবেলা ছিল না। বরং, এই অর্থ জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা, মহামারী প্রতিরোধের প্রস্তুতি এবং কিছু আচরণগত স্বাস্থ্য পরিষেবা, যেমন – মাদকাসক্তি নিরাময় ও আত্মহত্যা প্রতিরোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল।
নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল, লেটিশিয়া জেমস বলেছেন, “এই তহবিল হ্রাস আমাদের মাদক সংকট মোকাবিলায় বাধা দেবে, মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দেবে এবং হাসপাতালগুলোকে রোগীদের চিকিৎসায় হিমশিম খেতে হবে।
নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্য এই তহবিল হ্রাসের কারণে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৪ হাজার ৩শ কোটি টাকার সমান) ক্ষতির শিকার হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের তহবিল কমানো হলে হাম ও বার্ড ফ্লু’র মতো রোগগুলির প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় রাজ্যগুলোর প্রস্তুতি দুর্বল হয়ে পড়বে। এছাড়া, আধুনিক ডেটা সিস্টেম তৈরি, পরীক্ষাগারের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগের দ্রুত রিপোর্টিং এবং জৈব সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোও ব্যাহত হবে।
মামলায় আরও বলা হয়েছে যে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কংগ্রেসের সাংবিধানিক ক্ষমতাকে খর্ব করা হচ্ছে। কারণ, এই তহবিলগুলো নির্দিষ্টভাবে কংগ্রেসের অনুমোদন অনুযায়ী বরাদ্দ করা হয়েছিল।
তাই, এই তহবিল বাতিল করার আইনি অধিকার প্রশাসনের নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে এটি সর্বশেষ আইনি পদক্ষেপ। এর আগে, তাঁর নির্বাহী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১০০টিরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলাটি যদি আদালত পর্যন্ত গড়ায়, তবে তা একটি সাংবিধানিক সংকট তৈরি করতে পারে। কারণ, কংগ্রেস যদি কোনো বিষয়ে অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু প্রশাসন যদি সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে অস্বীকার করে, তাহলে বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন