আতঙ্কে যুক্তরাষ্ট্র! ভোটার ডেটা নিয়ে ট্রাম্পের এমন কান্ড!

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে ভোটারদের ব্যক্তিগত তথ্য চেয়ে চাপ বাড়াচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। দেশটির বিচার বিভাগ এখন বিভিন্ন রাজ্য সরকারের কাছে ভোটারদের বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইছে, যেখানে আংশিক সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বরও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এমনটাই জানা গেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন সূত্রে।

আগামী বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনগুলোতে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, তা নির্ধারিত হবে।

আর এর আগেই নির্বাচনে ফেডারেল সরকারের ভূমিকা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

খবরে প্রকাশ, সম্প্রতি রাজ্যের নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে বিচার বিভাগের সিভিল রাইটস ডিভিশনের প্রধান হারমিট ধিলনের স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়েছে।

যেখানে ভোটারদের নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর অথবা সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বরের শেষ চারটি সংখ্যাসহ ভোটার তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে।

বিচার বিভাগ রাজ্যগুলোকে জানিয়েছে, ফেডারেল আইন অনুযায়ী ভোটার তালিকা হালনাগাদ রাখার জন্য তাদের এই তথ্য প্রয়োজন।

কিন্তু অনেক রাজ্য সরকারের কর্মকর্তারা মনে করেন, বিচার বিভাগ তাদের এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ করছে।

কারণ নির্বাচন পরিচালনা এবং ভোটার তালিকা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের, ফেডারেল সরকারের নয়।

এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচন কর্মকর্তা ভোটারদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে এই তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

আরিজোনার সেক্রেটারি অফ স্টেট, ডেমোক্র্যাট দলের সদস্য অ্যাড্রিয়ান ফন্টস সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবো।

আমি আমার ভোটারদের ব্যক্তিগত তথ্য দিতে রাজি নই।

এটা হতে পারে না।”

ফন্টস আরও জানান, তাদের রাজ্যে ভোটার তালিকা নিয়মিতভাবে যাচাই করার ব্যবস্থা রয়েছে।

তিনি যোগ করেন, রাজ্য সরকার ফেডারেল সরকারকে ভোটারদের সম্পর্কে যে তথ্য সরবরাহ করবে, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো হয়ে যাবে।

পেনসিলভানিয়ার শীর্ষ নির্বাচন কর্মকর্তা আল স্মিডটও ভোটারদের সংবেদনশীল তথ্য দিতে রাজি হননি।

ধিলনকে লেখা এক চিঠিতে তিনি বিচার বিভাগের এই অনুরোধকে ‘ফেডারেল সরকারের নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রসারিত করার উদ্বেগজনক প্রচেষ্টা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

আরিজোনা ও পেনসিলভানিয়া ছাড়াও ক্যালিফোর্নিয়া, ইলিনয়, মেইন, মিনেসোটা এবং ওরেগনের নির্বাচন প্রধানরাও বিচার বিভাগের কাছ থেকে তথ্য চেয়ে চিঠি পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির নির্বাচন বিষয়ক আইন বিশেষজ্ঞ মাইকেল কাংয়ের মতে, বিচার বিভাগের ঠিক কী কারণে এই তথ্য দরকার, তা স্পষ্ট নয়।

তিনি বলেন, ‘ভোটার তালিকা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মানুষের সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বরের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।’

বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

তবে হারমিট ধিলন সিএনএনকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, তার বিভাগের ‘ফেডারেল ভোটাধিকার আইন’ প্রয়োগের দায়িত্ব রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘মুক্ত, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য পরিচ্ছন্ন ভোটার তালিকা এবং মৌলিক নির্বাচন সুরক্ষা অপরিহার্য।’

ফেডারেল আইন অনুযায়ী, রাজ্যগুলোকে ভোটার তালিকা রক্ষণাবেক্ষণ এবং মৃত বা স্থানান্তরিত হওয়া ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।

তবে এই তালিকায় ফেডারেল সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ করার কোনো ক্ষমতা নেই।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আসন্ন নির্বাচনে ভোটার জালিয়াতির অভিযোগ তোলার জন্য এই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

ইলিনয়ের গভর্নর জে বি প্রিটজকার সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা মূলত প্রমাণ করতে চাইছে যে তালিকায় মৃত ব্যক্তির নাম রয়েছে, তাই নির্বাচনগুলো অবৈধ এবং বাতিল করা উচিত।’

মে মাস থেকে, বিচার বিভাগ অন্তত ২৬টি রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

তাদের কাছ থেকে ভোটার তালিকা থেকে শুরু করে নির্বাচন কর্মকর্তাদের পরিচিতি পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

এদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

তিনি সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেছেন, রাজ্যগুলোকে ফেডারেল সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

এমনকি, নির্বাচনে ভোটার আইডি বাধ্যতামূলক করার জন্য একটি নির্বাহী আদেশের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তিনি।

ভোটারদের তথ্য চেয়ে পাঠানো নিয়ে সৃষ্ট এই বিতর্কের অবসান সম্ভবত আদালতেই হবে।

ক্যালিফোর্নিয়ার অরেঞ্জ কাউন্টিতে নাগরিক নন এমন ব্যক্তিদের ভোট দেওয়ার অভিযোগের তদন্তের অংশ হিসেবে বিচার বিভাগ মামলা করেছে।

তবে অরেঞ্জ কাউন্টির কর্মকর্তারা আদালতের নির্দেশ ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য দিতে রাজি হননি।

মিনেসোটার সেক্রেটারি অফ স্টেট, ডেমোক্র্যাট স্টিভ সাইমনও ভোটারদের ব্যক্তিগত তথ্য দিতে অস্বীকার করেছেন।

রাজ্যের রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা তাকে এই বিষয়ে নমনীয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তাদের মতে, এমনটা করলে ফেডারেল সরকারের সঙ্গে রাজ্যের ‘খরচসাপেক্ষ’ মামলা হতে পারে।

অন্যদিকে, সাইমন তার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ আসলে কী চায় এবং এই তথ্য দিয়ে তারা কী করবে, সে বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই।

একজন সাধারণ মানুষ সহজেই বুঝতে পারবে, তারা যে কারণ দেখাচ্ছে, সেটি আসল কারণ নয়।’

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *