এআই-এর পক্ষপাতিত্ব কমাতে গিয়ে ট্রাম্পের তোপের মুখে প্রযুক্তি, নতুন সংকট?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence – AI) নিয়ে বিতর্কের ঢেউ লেগেছে। এক সময় যেখানে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের এআই পণ্যগুলোতে বৈষম্য দূর করতে চেষ্টা চালিয়েছিল, সেখানে এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন রিপাবলিকান শিবির একে ‘উগ্র-বামপন্থী এআই’ (woke AI) আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

তাদের অভিযোগ, এই ধরনের এআই তৈরির চেষ্টা সমাজে বিভাজন তৈরি করছে এবং মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করছে।

গত কয়েক মাস ধরে, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগীয় কমিটি অ্যামাজন, গুগল, মেটা, মাইক্রোসফট, ওপেনএআই সহ বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির কাছে ‘উগ্র-বামপন্থী এআই’ বিষয়ক তাদের কার্যক্রমের বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন।

একই সাথে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগ তাদের ওয়েবসাইটে এআই বিষয়ক কিছু নিয়মকানুন থেকে ‘এআই-এর নিরপেক্ষতা’, ‘নিরাপত্তা’ এবং ‘দায়িত্বশীল এআই’-এর মতো শব্দগুলো সরিয়ে ফেলেছে।

এর বদলে তারা এখন গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে তারা ‘আদর্শগত পক্ষপাতিত্ব’ (ideological bias) কমানোর দিকে মনোযোগ দেন, যা মানুষের উন্নতি এবং অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করবে।

এই পরিবর্তনের ফলে প্রযুক্তি কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী এলিস মঙ্ক-এর মতো বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে এআই-এর উন্নতি এবং এর সুফল সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে।

আগে, প্রযুক্তি শিল্পে এমন এক ধরনের এআই নিয়ে কাজ চলছিল, যা ছবি শনাক্ত করতে এবং বুঝতে পারদর্শী। এই ধরনের এআইয়ে মানুষের চামড়ার রংয়ের ভিন্নতা এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য সঠিকভাবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল।

কৃষ্ণাঙ্গ বা শ্যামবর্ণের মানুষদের ছবি অনেক সময় বিকৃতভাবে আসত।

এলিস মঙ্ক-এর তৈরি করা একটি স্কেল ব্যবহার করে গুগলের মতো কোম্পানিগুলো তাদের এআই ইমেজ তৈরির পদ্ধতি উন্নত করেছে, যা বিভিন্ন ধরনের ত্বকের রং সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে সাহায্য করে।

কিন্তু এখন, এই ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এলিস মঙ্ক মনে করেন, তার তৈরি করা স্কেল হয়তো হুমকির মুখে পড়বে না, কারণ এটি ইতিমধ্যেই গুগলের বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কিন্তু ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন কমে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা তিনি করছেন।

অন্যদিকে, রিপাবলিকান পার্টির নেতারা মনে করেন, বর্তমান ডেমোক্র্যাট সরকারের অধীনে এআই নীতিগুলো সামাজিক বিভাজন তৈরি করছে।

উদাহরণস্বরূপ, তারা বাইডেন প্রশাসনের একটি প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে, ‘সঠিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এআই ব্যবস্থা ব্যক্তি এবং সমাজের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত ফল তৈরি করতে পারে।’

অতীতেও, এআই-এর পক্ষপাতিত্ব নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, স্ব-চালিত গাড়িগুলো (self-driving cars) কালো চামড়ার মানুষদের শনাক্ত করতে সমস্যা অনুভব করে, যা তাদের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়।

টেক্সট থেকে ছবি তৈরি করার মতো এআই প্রোগ্রামগুলো শল্য চিকিৎসকের ছবি তৈরি করতে গিয়ে ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই শ্বেতাঙ্গ পুরুষের ছবি তৈরি করেছে।

এমনকি, ফোনের লক খোলার জন্য ব্যবহৃত ফেস-ম্যাচিং সফটওয়্যারগুলোও এশীয়দের মুখ শনাক্ত করতে ভুল করেছে।

এই পরিস্থিতিতে, গুগলের ‘জেমিনি’ (Gemini) এআই চ্যাটবট ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছে।

এই চ্যাটবট বিভিন্ন পেশার মানুষের ছবি তৈরি করতে গিয়ে শ্বেতাঙ্গ এবং পুরুষদের প্রাধান্য দিয়েছে।

নারীদের ক্ষেত্রেও, অপেক্ষাকৃত কমবয়সী নারীদের ছবি দেখা গেছে।

গুগল দ্রুত এর ভুল স্বীকার করে এবং ছবি তৈরির এই বৈশিষ্ট্যটি সরিয়ে নেয়।

এআই নিয়ে এই বিতর্কের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে।

কারণ, বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তি এবং এআই-এর ব্যবহার বাড়ছে।

সরকারি বিভিন্ন পরিষেবা থেকে শুরু করে আর্থিক লেনদেন—সবকিছুতেই এআই-এর ব্যবহার বাড়ছে।

তাই, এআই-এর পক্ষপাতিত্ব এবং ভুলগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে এই প্রযুক্তি সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে পারে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *