এআই যুদ্ধে ট্রাম্পের নয়া ফন্দি! প্রযুক্তি জায়ান্টদের উপর কি কড়া নির্দেশ?

ট্রাম্পের ‘অ্যান্টি-ওয়েক’ এআই নির্দেশ: প্রযুক্তি জগতে বিতর্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশের জেরে প্রযুক্তি বিশ্বে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই আদেশের মূল লক্ষ্য হলো, সরকারি কাজে ব্যবহৃত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রযুক্তি যেন কোনো ‘উগ্র’ (woke) ধারণাকে সমর্থন না করে।

খবর অনুযায়ী, এই নির্দেশনার ফলে এখন থেকে সরকারি কাজে এআই প্রযুক্তি সরবরাহ করতে আগ্রহী কোম্পানিগুলোকে প্রমাণ করতে হবে যে তাদের চ্যাটবটগুলো ‘উগ্র’ নয়।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে অনেকে দেখছেন চীনের ক্রমবর্ধমান এআই প্রভাবের মোকাবিলা এবং আমেরিকান মূল্যবোধকে এআই প্রযুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করার একটি কৌশল হিসেবে। তবে, এই সিদ্ধান্ত প্রযুক্তি জগতে বিভাজন তৈরি করেছে।

কেউ কেউ একে এআই-এর পক্ষপাতিত্ব রোধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এটি প্রযুক্তি খাতের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ এবং সেন্সরশিপের শামিল।

এই আদেশের ফলে, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য এখন একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। তাদের দেখাতে হবে, কীভাবে তাদের এআই প্রযুক্তি কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করে না।

বিশেষ করে, ডাইভার্সিটি, ইক্যুইটি, এবং ইনক্লুশন (ডিইআই) সংক্রান্ত ধারণাগুলো, যেমন ক্রিটিক্যাল রেস থিওরি, লিঙ্গ পরিবর্তন, অচেতন পক্ষপাতিত্ব (unconscious bias), এবং পদ্ধতিগত বর্ণবাদ—এগুলো যেন তাদের এআই মডেলে প্রতিফলিত না হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে চীনের অনুরূপ কার্যক্রমের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। চীন সরকার এআই মডেল নিরীক্ষণের মাধ্যমে তাদের অভ্যন্তরীণ মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে তোলে এবং বিতর্কিত বিষয়গুলো ফিল্টার করে থাকে।

যদিও ট্রাম্পের এই নির্দেশিকা সরাসরি কোনো ফিল্টার বসানোর কথা বলেনি, তবে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে তাদের অভ্যন্তরীণ নীতি প্রকাশ করতে বলেছে, যা তাদের চ্যাটবটগুলোকে আদর্শগতভাবে নিরপেক্ষ প্রমাণ করতে সহায়তা করবে।

এই নির্দেশনার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা ভিন্নমত পোষণ করছেন। কেউ কেউ মনে করেন, এটি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে তাদের তৈরি করা এআই প্রযুক্তির ব্যাপারে আরও সতর্ক করবে।

আবার কারও মতে, ‘উগ্র’ বা ‘নন-উগ্র’—এ ধরনের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা কঠিন এবং এর ফলে এআই মডেলগুলোর স্বাধীনতা সীমিত হতে পারে।

এমনকি, এটি ভবিষ্যতে সরকারের পক্ষ থেকে এআই প্রযুক্তির রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের একটি খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এই বিতর্কের মধ্যে, গুগল, মাইক্রোসফট এবং ওপেনএআই-এর মতো বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, তারা নির্দেশিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য অপেক্ষা করছে এবং তাদের তৈরি করা প্রযুক্তি এরই মধ্যে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখার চেষ্টা করছে।

এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের জন্য এই ধরনের ঘটনা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের এই সময়ে, সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের এআই-এর নৈতিক ব্যবহার এবং পক্ষপাতমুক্ততা নিশ্চিত করতে কৌশল তৈরি করতে হবে।

একই সঙ্গে, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে উৎসাহিত করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করাটাও জরুরি।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *