যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence – AI) বিষয়ক নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে। এই পরিকল্পনায় সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি খাতের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রভাব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, যারা ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় সমর্থন জুগিয়েছিলেন।
আগামী নির্বাচনেও তাদের সমর্থন পেতে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের এই ‘এআই অ্যাকশন প্ল্যান’ গত জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফেরার পরেই তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এআই বিষয়ক নিয়মকানুন বাতিল করেন।
এরপর তার প্রযুক্তি উপদেষ্টাদের নতুন নীতি তৈরি করতে ছয় মাস সময় দেওয়া হয়। আগামী বুধবার এই পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো— বিদেশে এআই প্রযুক্তির প্রসার ঘটানো এবং বিশাল ডেটা সেন্টার (Data Center) তৈরির প্রক্রিয়া সহজ করা।
ডেটা সেন্টারগুলো এআই প্রোগ্রাম তৈরি ও পরিচালনার জন্য অত্যাবশ্যকীয়, কিন্তু এগুলো প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুতের চাহিদাও তৈরি করে।
এই পরিকল্পনায় ‘উওক এআই’ (Woke AI)-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রস্তাব থাকতে পারে।
‘উওক এআই’ হলো— প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের চোখে, এমন এক ধরনের এআই যা তাদের রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
বিশেষ করে চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) বা গুগলের জেমিনির (Gemini) মতো এআই চ্যাটবটগুলোতে তারা তাদের রাজনৈতিক আদর্শের প্রতিফলন দেখতে পান না।
ট্রাম্পের শীর্ষ এআই উপদেষ্টা ডেভিড স্যাকস দীর্ঘদিন ধরে ‘উওক এআই’-এর সমালোচনা করে আসছেন।
গুগলের একটি এআই ইমেজ জেনারেটর, যখন একজন আমেরিকান প্রতিষ্ঠাতার ছবি তৈরি করতে বলা হয়েছিল, তখন কৃষ্ণাঙ্গ, ল্যাটিনো এবং আদিবাসী আমেরিকানদের ছবি দেখা গিয়েছিল।
স্যাকসের মতে, “এআই-কে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে যে এটি সঠিক উত্তর দিতে পারে না, কারণ এতে ‘বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি’-কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে, পেন্টাগন সম্প্রতি চারটি শীর্ষ এআই কোম্পানির সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছে, যার অর্থমূল্য প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার।
এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে গুগলও। এছাড়া, ইলন মাস্কের xAI-ও চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
মাস্কের কোম্পানিকে ‘উওক এআই’-এর বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে, xAI-এর তৈরি করা একটি চ্যাটবট বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, যা ইহুদি বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করার পাশাপাশি হিটলারের প্রশংসা করে।
ট্রাম্প প্রশাসন ডেটা সেন্টারের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ সহজ করতে চাইছে।
এই ক্ষেত্রে কয়লা, গ্যাস ও পারমাণবিক শক্তির মতো উৎস ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ডেটা সেন্টারগুলোকে ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, একটি সাধারণ এআই ডেটা সেন্টার এক লাখ বাড়ির সমান বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
২০৩০ সাল নাগাদ ডেটা সেন্টারগুলো বর্তমানে জাপানের ব্যবহৃত বিদ্যুতের সমান বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে।
এআই প্রযুক্তির রফতানি নিয়েও নতুন পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
অতীতে, যুক্তরাষ্ট্র চীনসহ বিভিন্ন দেশের কাছে কিছু প্রযুক্তি রফতানি সীমিত করেছে, তবে প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর দাবি ছিল— বাইডেন প্রশাসন এই বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করে তাদের ক্ষতি করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন কিভাবে চীনের এআই আকাঙ্ক্ষাকে মোকাবেলা করে একই সঙ্গে মার্কিন এআই প্রযুক্তির রফতানি বাড়ায়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
এই পরিকল্পনার ফলে কাদের সুবিধা হবে, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
কিছু প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, বিশেষ করে মার্ক এন্ড্রিসেন, এআই-এর দ্রুত বিকাশের পক্ষে মত দিয়েছেন, অন্যদিকে ডেভিড স্যাকস-এর মতো কেউ কেউ বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন।
এআই বিষয়ক নীতি নির্ধারণ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে ভিন্ন মত রয়েছে।
শ্রমিক ইউনিয়ন, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করে একটি ‘জনগণের এআই অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরির আহ্বান জানিয়েছে।
তাদের মতে, এই পরিকল্পনা মূলত প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর স্বার্থ রক্ষা করবে, যেখানে জনসাধারণের অধিকার উপেক্ষিত হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস