ট্রাম্পের আবেদন, অভিবাসন বিতর্কে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শাসনামলে অভিবাসন সংক্রান্ত একটি বিতর্কিত আইনের প্রয়োগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। এই আইনের অধীনে ভেনেজুয়েলার একটি গ্যাংয়ের সদস্যদের দ্রুত বিতাড়িত করার যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, সেই বিষয়ে নিম্ন আদালতের একটি রায়ের বিরুদ্ধে তিনি এই আবেদন করেছেন।
বিষয়টি হলো, ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’ নামের একটি আইন, যা মূলত যুদ্ধের সময় বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেয় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। ট্রাম্প প্রশাসন এই আইনের ভিত্তিতে কিছু ভেনেজুয়েলীয় নাগরিককে দ্রুত বিতাড়িত করার উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে, নিম্ন আদালতের বিচারক জেমস বোয়াসবার্গ এই বিতাড়ন প্রক্রিয়া স্থগিত করেন।
তার মতে, এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে কিছু প্রশ্ন রয়েছে, যা আগে খতিয়ে দেখা দরকার। ট্রাম্পের আইনজীবীরা এখন চাইছেন, সুপ্রিম কোর্ট যেন বোয়াসবার্গের এই রায় বাতিল করে দেয়। তাদের যুক্তি হলো, জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চূড়ান্ত ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতেই থাকা উচিত।
আদালতের নথিপত্র বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রধান সলিসিটর জেনারেল সারা হ্যারিস সুপ্রিম কোর্টে বলেছেন, “সংবিধান এক্ষেত্রে একটি স্পষ্ট উত্তর দেয়: সেটি হলো প্রেসিডেন্ট। প্রজাতন্ত্র অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।”
অন্যদিকে, বিচারক বোয়াসবার্গের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পাশাপাশি, ট্রাম্প প্রায়ই নিম্ন আদালতের বিচারকদের সমালোচনা করেছেন। এমনকি, তিনি বোয়াসবার্গকে অভিশংসন করার কথাও বলেছিলেন। তবে, প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস এই বিষয়ে মন্তব্য করে বলেছেন, “বিচারিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে অভিশংসন একটি উপযুক্ত পদক্ষেপ নয়। এই উদ্দেশ্যে স্বাভাবিক আপিল প্রক্রিয়া রয়েছে।”
আদালতে মামলার শুনানিতে, বিতাড়িত হতে যাওয়া ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের পক্ষে বলা হয়েছে, তাদের যথাযথ আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাদের আশঙ্কা, এই আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে ভিনদেশিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
জানা যায়, বিতর্কিত এই আইনের আওতায় বিতাড়নের পূর্বে প্রায় ২০০ জনের বেশি ভেনেজুয়েলীয় নাগরিককে এল সালভাদরে পাঠানো হয়েছিল। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে অন্য আইনের অধীনে বিতাড়িত করা হয়েছে।
আদালতে শুনানির সময়, বিচারক কারেন হেন্ডারসন এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আক্রমণ’ শব্দটির অর্থ কী, তা তৎকালীন কংগ্রেস এবং জনগণের কাছে পরিষ্কার ছিল। ১৯ শতকের শেষের দিকে, যখন এই আইন তৈরি হয়েছিল, তখন এর অর্থ ছিল সামরিক অর্থে অনুপ্রবেশ।”
আদালতের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, এর আগে ১৯৪৮ সালে ‘এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট’ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা হয়েছিল। সেই সময় আদালত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানকে এই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক স্বাধীনতা দিয়েছিল। তবে, বিচারক হেন্ডারসন মনে করেন, সেই রায় এই মামলার ক্ষেত্রে সরাসরি প্রযোজ্য নয়।
এই মুহূর্তে, সুপ্রিম কোর্টের জরুরি বিবেচনাধীন থাকা ট্রাম্প প্রশাসনের তৃতীয় মামলা এটি। এর আগে, আদালতকে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের চেষ্টা এবং শিক্ষক স্বল্পতা মোকাবিলায় রাজ্যগুলোকে দেওয়া অনুদান স্থগিত করার বিষয়েও আবেদন জানানো হয়েছিল।
বর্তমানে, এই মামলার রায় কী হয়, সেদিকে সবাই তাকিয়ে আছে। কারণ, এর মাধ্যমে অভিবাসন আইন এবং বিচার বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন