আমেরিকায় ‘গুম’: ট্রাম্পের আমলে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ভয়ঙ্কর পরিণতি!

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের আটকের পর তাদের এল সালভাদরে পাঠানোর ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের পরিবারগুলো এই পদক্ষেপকে অতীতের ল্যাটিন আমেরিকার স্বৈরশাসকদের শাসনের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

তাদের অভিযোগ, আটকদের সম্পর্কে কোনো তথ্য না দিয়ে অনেকটা ‘নিখোঁজ’ করে দেওয়া হচ্ছে।

গত ১৩ই মার্চ, টেক্সাসের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে নেইভার রেঞ্জেল নামের এক ভেনেজুয়েলার নাগরিককে আটক করা হয়। তার বান্ধবী রিকি অ্যালেজান্দ্রা উজকাতেগুই গুতেরেস জানান, সেদিন সকালে কিছু সরকারি লোক এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়।

আটকের সময় নেইভার তাকে বলেছিলেন, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে।’ কিন্তু এরপর থেকেই তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা অনেক চেষ্টা করেও নেইভারের ব্যাপারে কোনো তথ্য জানতে পারেননি। তারা বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে ফোন করে জানতে চান, কিন্তু কোনো সদুত্তর মেলেনি।

পরে জানা যায়, নেইভারসহ অন্তত ২৫২ জন ভেনেজুয়েলার নাগরিককে এল সালভাদরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং সেখানে তাদের কারাগারে বন্দী করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই ঘটনার পর মানবাধিকার সংস্থাগুলো এটিকে ‘জোরপূর্বক গুম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তাদের মতে, কোনো ব্যক্তিকে আটক করার পর তার অবস্থান সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ না করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

আরেক ভেনেজুয়েলার নাগরিক, রিকার্ডো প্রাদা ভাসকুয়েজকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ডেট্রয়েট থেকে আটক করা হয়। তার ভাই হুগো প্রাদা জানান, রিকার্ডোকে মার্চ মাসের ১৫ তারিখে ভেনেজুয়েলায় ফেরত পাঠানোর কথা ছিল, কিন্তু তিনি সেখানে পৌঁছাননি।

পরে জানা যায়, তাকেও এল সালভাদরের একটি কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, রিকার্ডো কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ভালো জীবনের আশায় এসেছিলেন।

হুগো প্রাদা বলেন, “এটা অবিশ্বাস্য যে, তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হলো এবং কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হলো, হিটলার যেমন ইহুদিদের সঙ্গে করেছিলো। যুক্তরাষ্ট্র একটি গণতান্ত্রিক দেশ, অথচ এখানে যেন আমরা ৫০ বা ১০০ বছর পিছিয়ে গেছি।”

আটকদের পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনদের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। তাদের অভিযোগ, ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হচ্ছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে আরও অনেকের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটতে পারে।

ভেনেজুয়েলার আমেরিকান ককাসের পরিচালক অ্যাডেলিস ফেরো বলেছেন, “এই ঘটনার কারণে ভেনেজুয়েলার কমিউনিটিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষজন ভীত হয়ে আছে।

এমনকি যাদের বৈধ কাগজপত্র আছে, তারাও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের কোথাও এমনটা ঘটা উচিত নয়, বিশেষ করে আমেরিকাতে তো নয়ই।”

ভুক্তভোগী পরিবারগুলো তাদের স্বজনদের মুক্তি এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ ঘটনার বিষয়ে স্বচ্ছতা দেখাচ্ছে না।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *