মার্কিন বিমানবাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান তৈরি করতে প্রস্তুত হচ্ছে বোয়িং। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে এই প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়, যার প্রাথমিক চুক্তি মূল্য প্রায় ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
এই বিমানের মূল লক্ষ্য হলো চীনের সামরিক সক্ষমতাকে মোকাবেলা করা। পেন্টাগন সূত্রে জানা গেছে, এই নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমানগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, যা বর্তমানের বিমানের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হবে এবং চীনের আকাশ প্রতিরক্ষাকে ভেদ করতে সক্ষম হবে।
এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নেক্সট জেনারেশন এয়ার ডমিনেন্স’ বা সংক্ষেপে ‘এনজিএডি’। অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমান একটি মনুষ্যবিহীন ড্রোন বহরকে নেতৃত্ব দেবে, যা শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করতে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে।
ট্রাম্প এই বিমানের সম্ভাব্য একটি নামের ইঙ্গিত দিয়ে একে ‘এফ-47’ হিসেবে অভিহিত করেন।
মার্কিন বিমানবাহিনীর প্রধান জেনারেল ডেভিড অলভিন এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা এর মাধ্যমে আধুনিক আকাশ যুদ্ধের পরবর্তী অধ্যায় রচনা করতে যাচ্ছি।” প্রতিরক্ষা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অত্যাধুনিক বিমান বহর মিত্র দেশগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতার একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করবে।
তবে এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা এবং বিশাল খরচ নিয়ে ইতিমধ্যে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে উন্নত যুদ্ধবিমান এফ-35 তৈরি প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি, যেখানে ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়াও, পেন্টাগনের ভবিষ্যৎ কৌশলগত বোমারু বিমান বি-21 রাইডার-এও একই ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
ইতিমধ্যে এক হাজারের বেশি এফ-35 বিমান তৈরি করা হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিত্রদের জন্য সরবরাহ করা হয়েছে। অন্যদিকে, প্রায় ১০০টি বি-21 স্টিলথ বোমারু বিমান তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে, যার আনুমানিক খরচ ১৩ হাজার কোটি ডলার।
বর্তমানে এই বিমানগুলোর পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন চলছে।
সামরিক বিশ্লেষক ড্যান গ্রেজিয়ার-এর মতে, চীনসহ অন্যান্য সম্ভাব্য প্রতিপক্ষের সঙ্গে ভবিষ্যতের যুদ্ধে ড্রোন এবং মহাকাশ প্রযুক্তির গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ধরনের অত্যাধুনিক মানব-নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধবিমানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে বরাদ্দকৃত ২ হাজার কোটি ডলার কেবল একটি সূচনা, প্রকল্পের চূড়ান্ত খরচ কয়েকশ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে।
এনজিএডি যুদ্ধবিমানের বিস্তারিত নকশা এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে ট্রাম্প জানিয়েছেন যে গত পাঁচ বছর ধরে এর পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন চলছে।
লকহিড মার্টিন এবং বোয়িং উভয় সংস্থাই তাদের সম্ভাব্য নকশার চিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে একটি ফ্ল্যাট, পাখাবিহীন এবং তীক্ষ্ণ নাকযুক্ত বিমানের ছবি দেখা যায়।
নৌবাহিনীর জন্য এনজিএডি বিমানের নকশা তৈরির প্রতিযোগিতা এখনো চলছে, যেখানে নর্থরোপ গ্রুম্যান এবং বোয়িং-এর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
আগের বাইডেন প্রশাসন এনজিএডি প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা পর্যালোচনা করার জন্য এর কার্যক্রম কিছুদিনের জন্য স্থগিত করেছিল। তবে থিংক ট্যাংক এবং অ্যাকাডেমিক গবেষণা শেষে জানানো হয়, চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতের পরিস্থিতিতে এনজিএডি-এর প্রয়োজনীয়তা এখনো অপরিসীম।
প্রতিরক্ষা বিভাগের একজন কর্মকর্তার মতে, এনজিএডি বিমান ‘আকাশ পর্যবেক্ষণে সম্পূর্ণ নতুন এক মাত্রা’ যোগ করবে।
এফ-35 অথবা অন্যান্য বিমানের তুলনায় এর পাল্লা অনেক বেশি হবে, ফলে আকাশ পথে জ্বালানি ভরার প্রয়োজনীয়তাও হ্রাস পাবে।
বিমানের জন্য উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) তৈরির পর এটির মনুষ্যবিহীন সংস্করণ তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস