ডোনাল্ড ট্রাম্পের চলচ্চিত্র বাণিজ্যনীতি: বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের সৃষ্টি
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, তিনি বিদেশি ফিল্মে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে চান। তার এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে চলচ্চিত্র শিল্পে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
ট্রাম্পের মতে, এই পদক্ষেপটি মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্পকে বিদেশি ফিল্ম নির্মাতাদের কাছ থেকে রক্ষা করবে। তিনি তার এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে বিদেশি সরকারগুলোর দেওয়া প্রণোদনাকে দায়ী করেছেন, যা মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আকৃষ্ট করছে।
ট্রাম্পের দাবি, বিদেশি ফিল্ম তৈরি করা একটি “জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি” এবং এটি “বার্তা ও প্রচারণার” অংশ। তিনি তার সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, “আমরা আবারও আমেরিকায় সিনেমা তৈরি করতে চাই!” তিনি আরও জানান, বাণিজ্য দপ্তর এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিকে তাৎক্ষণিকভাবে এই শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন।
লস অ্যাঞ্জেলেসে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন প্রযোজনা গত এক দশকে প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, অন্যান্য দেশগুলো চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রযোজকদের বেশি কর ছাড় ও নগদ অর্থ দিচ্ছে।
ফলে, নির্মাতারা এখন তাদের সিনেমা তৈরির জন্য বিদেশি বাজারের দিকে ঝুঁকছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ কনটেন্ট তৈরিতে ব্যয় হবে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের রাজনীতিবিদরা তাদের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্ক বলেছেন, তারা তাদের দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের অধিকারের পক্ষে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করবেন।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সনও বলেছেন, তারা এই শুল্কের বিস্তারিত জানার জন্য অপেক্ষা করছেন এবং তাদের চলচ্চিত্র শিল্পের পক্ষে সমর্থন দেবেন।
এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হচ্ছে, যখন ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন এবং বিশ্বজুড়ে শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যা বাজারের অস্থিরতা তৈরি করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দার কারণ হতে পারে। চীন ইতিমধ্যেই এই শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় তাদের দেশে আসা মার্কিন সিনেমার সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে।
সাবেক বাণিজ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উইলিয়াম রেইনশ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে তা মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য ধ্বংসাত্মক হবে। তার মতে, সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা বা জরুরি অবস্থার যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে বের করা কঠিন হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ব চলচ্চিত্র বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। এর ফলে, হলিউডের সিনেমাগুলোর ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং অন্যান্য দেশের চলচ্চিত্র শিল্প আরও শক্তিশালী হতে পারে।
তবে, এর চূড়ান্ত প্রভাব সম্পর্কে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান