মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। অনেকে মনে করছেন, শিল্পের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে হস্তক্ষেপের চেষ্টা স্বৈরাচারী শাসনের ইঙ্গিত দেয়।
বিষয়টিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার নাৎসি জার্মানির ‘বিকৃত রুচির শিল্প’ বিতর্কের সঙ্গে তুলনা করছেন অনেকে।
ট্রাম্পের একটি নতুন প্রতিকৃতি উন্মোচন করা হয়েছে, যেখানে তাকে বিজয়ীর ভঙ্গিতে দেখা যাচ্ছে। হোয়াইট হাউজের প্রবেশমুখে স্থাপন করা হয়েছে এই ছবি।
সমালোচকদের মতে, এটি এক ধরনের ‘ক্ষমতা প্রদর্শনের’ চেষ্টা। এর আগে, কলোরাডো রাজ্যের ক্যাপিটলে তার একটি প্রতিকৃতি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে দাবি করে সেটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
শুধু তাই নয়, স্মিথসোনিয়ান জাদুঘরগুলো থেকে ‘অনুপযুক্তideology ’ দূর করার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
এই ঘটনাগুলো কি নিছক ক্ষমতা প্রদর্শনের বহিঃপ্রকাশ, নাকি গণতন্ত্র ও সংস্কৃতির জন্য গভীর কোনো বিপদ? প্যারিসের একটি প্রদর্শনীতে নাৎসি জার্মানির সময় শিল্পকলার ওপর চালানো নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
‘বিকৃত রুচির শিল্প: নাৎসিদের অধীনে আধুনিক শিল্পের বিচার’ শীর্ষক এই প্রদর্শনীতে দেখা যায়, কীভাবে স্বৈরাচারী শাসকেরা নিজেদের স্বার্থে শিল্পকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল।
১৯৩০-এর দশকে জার্মানিতে আধুনিক শিল্পকলার ওপর নেমে আসে চরম আঘাত। অনেক শিল্পকর্ম ধ্বংস করা হয়, আবার কিছু হারিয়ে যায়।
১৯৩৭ সালে মিউনিখে ‘এন্টার্টে কুন্সট’ (Degenerate Art) নামক এক প্রদর্শনীতে আধুনিক শিল্পকর্মগুলোকে উপহাসের জন্য উপস্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে নাৎসিরা তাদের রাজনৈতিক আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল।
প্রদর্শনী শেষে যেগুলোর বাজারমূল্য ছিল, সেগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়।
ঐ বছরই, একই শহরে ‘গ্রেট জার্মান আর্ট প্রদর্শনী’ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নাৎসি আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ শিল্পকর্মগুলো প্রদর্শন করা হয়।
হিটলার নিজে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন এবং আধুনিক শিল্পকে ‘বিকৃত রুচির’ আখ্যা দেন। তিনি এ ধরনের শিল্পকর্মকে জার্মান জাতির অবক্ষয়ের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেন।
তবে, ট্রাম্পের কার্যকলাপের সঙ্গে নাৎসিদের এই ধরনের পদক্ষেপের তুলনা করা কতটা যুক্তিযুক্ত? সমালোচকেরা বলছেন, সরাসরি তুলনা করা কঠিন।
তবে, উভয় ক্ষেত্রেই শিল্পের স্বাধীনতা খর্ব করার প্রবণতা দেখা যায়।
ঐতিহাসিকরা মনে করেন, নাৎসিরা ছিল দক্ষ পপুলিস্ট। তারা জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত।
ট্রাম্পও তার রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি করতে একই ধরনের কৌশল নিয়েছেন।
শিল্পকলার স্বাধীনতা এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিপদ সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হলে, প্রত্যেক নাগরিককে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান