মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের (Federal Reserve) স্বাধীনতা নিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আক্রমণ বর্তমানে আলোচনার বিষয়। ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েলকে (Jerome Powell) পদ থেকে সরানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর এই ধরনের পদক্ষেপ মার্কিন অর্থনীতির জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা খর্ব হলে তা বাজারের স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করবে এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে দেবে।
ফেডারেল রিজার্ভ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে এর প্রধান কাজ হল সুদের হার (interest rate) নিয়ন্ত্রণ করা।
অর্থনীতির খারাপ পরিস্থিতিতে রিজার্ভ সুদের হার কমিয়ে দেয়, ফলে ঋণ নেওয়া সহজ হয় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ে। অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতি (inflation) নিয়ন্ত্রণে আনতে সুদের হার বাড়ানো হয়, যা অর্থনীতির গতিকে কিছুটা ধীর করে।
এই কাজটি সঠিকভাবে করার জন্য ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা অত্যন্ত জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে, ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হয়েছিল।
১৯৭০-এর দশকে তৎকালীন ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান আর্থার বার্নসকে (Arthur Burns) প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের (Richard Nixon) রাজনৈতিক চাপে নতি স্বীকার করতে হয়েছিল। এর ফলস্বরূপ, মূল্যস্ফীতি বেড়ে গিয়েছিল, যা অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ছিল।
পরবর্তীকালে, পল ভলকারকে (Paul Volcker) ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি সুদের হার ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন, যা অর্থনীতির জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছিল।
যদিও এর ফলস্বরূপ মন্দা দেখা দেয় এবং বেকারত্ব বাড়ে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছিল। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারাই একটি স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবচেয়ে বড়ো সুবিধা।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বর্তমান পদক্ষেপের কারণে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন। পাওয়েলকে যদি তাঁর পদ থেকে সরানো হয়, তবে শেয়ার বাজারে দরপতন এবং বন্ডের সুদের হার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর ফলে, গৃহঋণ, গাড়ির ঋণ এবং ক্রেডিট কার্ডের সুদের হারও বৃদ্ধি পেতে পারে, যা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। বিনিয়োগকারীরা চান একটি স্বাধীন ফেডারেল রিজার্ভ, যা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করবে এবং মুদ্রানীতি (monetary policy) আরও সুচারুভাবে পরিচালনা করতে পারবে।
বর্তমানে, সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) এমন একটি মামলার শুনানি চলছে, যেখানে প্রেসিডেন্ট চাইলেই ফেডারেল রিজার্ভের প্রধানকে অপসারণ করতে পারেন কিনা, সেই বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
এই মামলার রায় ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা এবং এর ভবিষ্যৎ কর্মপদ্ধতির ওপর বড় প্রভাব ফেলবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য সরাসরি প্রযোজ্য না হলেও, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা এবং এর গুরুত্ব উভয় দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকও (Bangladesh Bank) মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য কাজ করে। একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেকোনো দেশের অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য।
তথ্য সূত্র: