মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সম্প্রতি ঘোষিত একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। এই চুক্তিতে বিদ্যমান শুল্ক কাঠামোতেই বহাল রাখা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
খবরটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর বরাত দিয়ে জানা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্য ক্ষেত্রে উত্তেজনা প্রশমনের পরিবর্তে অনিশ্চয়তা আরও বাড়বে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এই সীমিত পরিসরের চুক্তিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর বাণিজ্য বিরোধ, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে চলমান সমস্যা সমাধানে কতটা সহায়ক হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ব্রিটেন থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে। যদিও এই চুক্তিতে কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তবে বিস্তারিত এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি বাণিজ্য চুক্তিতে বিস্তারিত বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা অপরিহার্য।
অর্থনীতিবিদ জো ব্রুসয়েলাস এক সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন, “যে বাণিজ্য চুক্তিতে বিস্তারিত বিষয়গুলো এখনো আলোচনাধীন, তাকে আসলে চুক্তি বলা যায় না।
এই ধরনের চুক্তি বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা দূর করতে যথেষ্ট নয়।”
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউজ থেকে এই চুক্তিকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। ট্রাম্প তাঁর সামাজিক মাধ্যমে এটিকে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং উত্তেজনাপূর্ণ দিন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ব্রিটেনের পক্ষ থেকেও এই চুক্তিকে স্বাগত জানানো হয়েছে, যদিও তারা স্বীকার করেছে যে এটি একটি ‘অপূর্ণাঙ্গ’ চুক্তি।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার বলেছেন, ‘গতকালকের চেয়ে আজকের পরিস্থিতি ভালো’। এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে উভয় পক্ষই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এর প্রভাব কেমন হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের মোট বাণিজ্যের মাত্র ৩ শতাংশ।
তাই, চীনের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এর প্রভাব খুবই সীমিত।
উল্লেখ্য, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক বিদ্যমান এবং চীন বর্তমানে আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকর শুল্কের হার ২২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত ১০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের আগে এই হার ছিল মাত্র ২.৫ শতাংশ।
ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক জাস্টিন উলফার্স বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই একটি উচ্চ শুল্কের দেশ হিসেবে পরিচিত, এবং এই চুক্তি সেই পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে না।
বাণিজ্য যুদ্ধও অব্যাহত থাকবে।”
এই পরিস্থিতিতে, আগামী দিনে জেনেভায় মার্কিন ও চীনা কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ব। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখনই কোনো বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট শুধু ‘উত্তেজনা কমানোর’ আশা করছেন।
অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যেকার এই চুক্তির ফলে বিশ্ব অর্থনীতির খুব বেশি পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম।
বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্কের উচ্চহার বহাল থাকলে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন