ট্রাম্পের বিশাল বিল: আপনার বাড়ির উপর কেমন প্রভাব?

যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন খাতে পরিবর্তনের হাওয়া: ট্রাম্পের নতুন বিলের প্রভাব।

যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে, যা দেশটির আবাসন খাতের জন্য সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত এই বিলটি ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ নামে পরিচিত।

এই বিল মূলত একটি বড় ধরনের কর সংস্কার প্রস্তাব, যা দেশটির অর্থনীতিতে বিভিন্ন পরিবর্তন আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আবাসন খাতের উপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আলোচনা চলছে।

আমাদের আজকের প্রতিবেদনে, এই বিলটির মূল বিষয়গুলো এবং এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলো তুলে ধরা হলো, যা বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

এই বিলের প্রধান উদ্দেশ্য হলো, ট্রাম্প প্রশাসনের আগের কর হ্রাস সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলোকে স্থায়ী করা। তবে এর পাশাপাশি, এই বিলে আবাসন সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন প্রস্তাব করা হয়েছে, যা স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে বাড়ি নির্মাণ এবং উচ্চ করের রাজ্যগুলোতে বসবাসকারীদের জন্য কর সুবিধা বাড়াতে পারে।

তবে সমালোচকেরা বলছেন, এই বিলের কিছু ধারা ধনী ব্যক্তি এবং প্রভাবশালী জমির মালিকদের সুবিধা করে দিতে পারে।

বিলটিতে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য আবাসনের সুযোগ বাড়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব আনা হয়েছে। এর মাধ্যমে, যারা কম আয়ের মানুষ, তাদের জন্য ভাড়ার আবাসন তৈরি করতে উৎসাহ দেওয়া হবে।

এই উদ্দেশ্যে, একটি ফেডারেল প্রোগ্রাম, ‘লো-ইনকাম হাউজিং ট্যাক্স ক্রেডিট’ (LIHTC) -এর সুযোগ আরও বাড়ানো হবে। এর ফলে, বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা কম খরচে ভাড়ার আবাসন তৈরি করতে উৎসাহিত হবেন।

হিসাব অনুযায়ী, এই পরিবর্তনের ফলে ২০২৬ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রায় ৫ লক্ষ ২৭ হাজার ৭০০ অতিরিক্ত ভাড়ার আবাসন তৈরি করা সম্ভব হতে পারে।

বিলটিতে উচ্চ করের রাজ্যগুলোতে বসবাসকারী বাড়ির মালিকদের জন্য কর ছাড়ের পরিমাণও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে, ওই সব রাজ্যের বাসিন্দারা তাঁদের রাজ্য ও স্থানীয় কর বাবদ দেওয়া অর্থের একটি বড় অংশ ফেডারেল ট্যাক্স থেকে বাদ দিতে পারবেন।

উদাহরণস্বরূপ, নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়ার মতো বেশি করের রাজ্যগুলোতে বসবাসকারীরা এই সুবিধা পেতে পারেন।

আবাসন খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই বিলটি নির্মাণ শিল্প এবং আবাসন ব্যবসায়ীদের জন্য ইতিবাচক হতে পারে। তবে, এই বিলের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার যোগ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এর ফলে সুদের হার বাড়তে পারে, যা বাড়ি কেনার খরচ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। উচ্চ সুদের হার, নতুন বাড়ি নির্মাণ এবং মানুষের বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

এই বিলের একটি বিতর্কিত দিক হলো, এটি ভাড়া নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত অ্যালগরিদমগুলোর উপর স্থানীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ সীমিত করতে পারে। এর ফলে, বাড়িওয়ালাদের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে একচ্ছত্র ক্ষমতা তৈরি হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই বিলটি সরাসরি বাংলাদেশের উপর প্রভাব ফেলবে না, তবে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে এর কিছু প্রভাব থাকতে পারে। যেমন, সুদের হার বাড়লে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের উপর সামান্য হলেও প্রভাব পড়তে পারে।

এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।

আবাসন সংক্রান্ত নীতি এবং অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো একটি দেশের মানুষের জীবনযাত্রার উপর গভীর প্রভাব ফেলে। তাই, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমন পরিবর্তনের দিকে নজর রাখা আমাদের জন্য জরুরি।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *