মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবাদ: চেক প্রজাতন্ত্রের পথে?

যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চলমান প্রতিবাদ কর্মসূচিগুলো কি চেক প্রজাতন্ত্রের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারে? সম্প্রতি এক গবেষণা বলছে, চেক প্রজাতন্ত্রের গণআন্দোলন কিভাবে একজন বিতর্কিত বিলিওনেয়ার নেতার পতন ঘটিয়েছিল, তা ট্রাম্প বিরোধীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হতে পারে।

চেক প্রজাতন্ত্র এক সময়কার সমাজতান্ত্রিক শাসনের অধীন ছিল, যা ট্রাম্প বিরোধীদের জন্য অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে। দেশটির এই অভিজ্ঞতা বুঝিয়ে দেয় কিভাবে রাস্তায় নেমে আসা প্রতিবাদ, ভোটের মাধ্যমে একজন স্বৈরাচারী নেতার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে।

চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ বাবিশের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে “মিলিয়ন মোমেন্টস ফর ডেমোক্রেসি” নামক একটি সংগঠন বিক্ষোভ শুরু করে। বাবিশকে “চেক ট্রাম্প” হিসেবে অভিহিত করা হতো। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল, এবং তিনি দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতেন।

বিক্ষোভকারীরা বাবিশের পদত্যাগ দাবি করে নিয়মিত সমাবেশ করতে থাকে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে কমিউনিস্ট শাসনের পতনের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশেও বাবিশের বিরুদ্ধে জনমত দেখা যায়।

যদিও কোভিড-১৯ পরিস্থিতি এবং বাবিশের অনড় অবস্থানের কারণে বিক্ষোভ কিছুটা কমে গিয়েছিল, কিন্তু ২০২১ সালের নির্বাচনে বাবিশের দল পরাজিত হয়।

এই প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও, চেক প্রজাতন্ত্রের এই অভিজ্ঞতা ট্রাম্প বিরোধীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিতে পারে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভেন লেভিটস্কি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবাদ কর্মসূচিগুলো এখনও প্রাসঙ্গিক।

যদিও বিক্ষোভের মাধ্যমে সরাসরি ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরানো সম্ভব নাও হতে পারে, তবে এটি জনমতকে প্রভাবিত করতে পারে এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে শক্তিশালী করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি “হ্যান্ডস অফ” র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রতিবাদকারীরা ভোটারদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করেন। চেক প্রজাতন্ত্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক জিরি পেহে বলেন, “জনগণকে জাগিয়ে তোলার এবং তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন করার কৌশল” এখানে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভকে সফল করতে হলে, বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। চেক প্রজাতন্ত্রের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী জোট গঠন করা যেতে পারে।

ডেমোক্রেট দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিবাদ কর্মসূচির পাশাপাশি একটি কার্যকর আইন প্রণয়ন কৌশলও প্রয়োজন। তাদের মতে, আগামী নির্বাচনে জয়লাভ করে প্রতিনিধি পরিষদ এবং সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া গেলে, ট্রাম্পকে মোকাবিলা করা সহজ হবে।

চেক প্রজাতন্ত্রের এই দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবাদকারীরা কীভাবে তাদের কর্মসূচিকে আরও শক্তিশালী করতে পারে, তা এখন দেখার বিষয়।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *