যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির প্রভাব নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারের সরকারি বন্ড নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই নিলামের ফলাফল বাজারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বন্ডের চাহিদা কেমন থাকে, বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কেমন, সেদিকে সবার নজর থাকবে।
যদি বন্ডের চাহিদা কম থাকে, তাহলে এর ফলস্বরূপ বন্ডের সুদ (yield) বাড়তে পারে। বন্ডের সুদ এবং দামের মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক রয়েছে।
বেশি চাহিদা থাকলে দাম বাড়ে, সুদ কমে; আর চাহিদা কম থাকলে দাম কমে, সুদ বাড়ে। সুদ বাড়লে সরকারের ঋণ নেওয়ার খরচও বেড়ে যাবে।
কারণ, ট্রেজারি বন্ডের সুদ বাজারের অন্যান্য অনেক সুদের হারের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। ফলে, ভোক্তাদের গাড়ি ঋণ এবং ক্রেডিট কার্ডের মতো জিনিসের সুদও বাড়তে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের করনীতি ফেডারেল ঋণের বোঝা বাড়িয়ে দেবে, এমন ধারণা বাজারে বিদ্যমান। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নাও হতে পারে, এমন উদ্বেগ অনেক বছর ধরেই শোনা যাচ্ছে, কিন্তু বাজারের অংশগ্রহণকারীরা এখন এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
এদিকে, বন্ডের সুদ এই বছর অনেক বেড়েছে, কারণ বিনিয়োগকারীরা মার্কিন সরকারের কাছে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশি ক্ষতিপূরণ চাইছেন। এমনকি মুডিজ-এর রেটিং কমানোর ফলে এই উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
মুডিজ যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমিয়ে দেওয়ায় বাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বন্ড নিলাম বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
যদি নিলামে দুর্বল ফল হয়, তাহলে বন্ডের সুদ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করবে। তবে, ভালো ফল হলে বাজার কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে।
সাধারণত, স্বল্পমেয়াদী বন্ডের চাহিদা ভালো থাকে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী বন্ডের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা দ্বিধা বোধ করছেন। এর কারণ হলো বাণিজ্য নীতি এবং বাজেট ঘাটতি নিয়ে অনিশ্চয়তা।
বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদে সরকারকে ঋণ দিলে ঝুঁকি বাড়তে পারে। শেয়ার বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার নিম্নমুখী ছিল। ডাউ জোন্স সূচক ২৫০ পয়েন্টের বেশি কমেছে, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ০.৩ শতাংশ এবং প্রযুক্তি খাতের নাসডাক কম্পোজিট ০.২৫ শতাংশ কমেছে।
ডলারের বিনিময় হারও কমেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অস্থিরতা নির্দেশ করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিনিয়োগকারীরা এখন মূল্যস্ফীতি এবং ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর মতো বিষয়গুলোও বিবেচনা করছেন।
সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, মে মাসে ভোক্তা মূল্যসূচক প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা কমেছে। মূল্যস্ফীতি কমলে বন্ডের মতো স্থিতিশীল সম্পদের চাহিদা বাড়ে।
এই মুহূর্তে, বাজারের এই অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলবে কিনা, তা বলা কঠিন। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এই ধরনের পরিবর্তন বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে, যা বাংলাদেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক ঋণের ওপর পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন