মার্কিন সীমান্তে সেনা! ট্রাম্পের নির্দেশে যা ঘটল…

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারে ট্রাম্প প্রশাসনের নয়া কৌশল, বাড়ছে সেনা উপস্থিতি।

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর নিরাপত্তা জোরদার করতে নতুন কৌশল নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই লক্ষ্যে সীমান্তে সেনা উপস্থিতি কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। সৈন্যদের প্রধান কাজ হলো সীমান্ত অতিক্রম করতে চাওয়া অভিবাসন প্রত্যাশীদের প্রতিহত করা। তবে, এই পদক্ষেপের ফলে সীমান্তে বসবাসকারী সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা এবং অধিকার কতটা সুরক্ষিত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আরিজোনার নোগালেস এলাকার সীমান্ত অঞ্চলে সেনাবাহিনীর এক সদস্য জানিয়েছেন, সীমান্তে টহল দেওয়াটা অনেক সময় একঘেয়ে লাগে। কারণ, সবসময় তেমন কোনো ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় না। তবে, তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। তারা মনে করেন, সীমান্তে তাদের উপস্থিতিই অনেক ক্ষেত্রে অবৈধ অনুপ্রবেশ কমাতে সাহায্য করে।

সম্প্রতি, অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেলেও, ট্রাম্প প্রশাসন সীমান্তে নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে চাইছে। এর অংশ হিসেবে, সীমান্তে প্রায় ৭,৬০০ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া, বর্ডার পেট্রোল এজেন্টদের জন্য ১০,০০০ ডলার পর্যন্ত আকর্ষণীয় বেতনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সীমান্তে নজরদারির জন্য অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে সামরিক যান, হেলিকপ্টার এবং ড্রোন।

সামরিক বাহিনীর এই অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছে একটি নতুন কমান্ড সেন্টার, যা অ্যারিজোনার একটি সামরিক প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে স্থাপন করা হয়েছে। এখানে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করে সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

আগে সীমান্ত রক্ষার কাজটি মূলত বেসামরিক কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে ছিল। কিন্তু এপ্রিল মাস থেকে সীমান্ত এলাকাকে ‘সামরিক জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে, সৈন্যদের বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করা লোকজনকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এমনকি, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করারও সুযোগ রয়েছে।

সামরিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সৈন্যদের এখন রক্ষণাবেক্ষণ এবং গুদামজাত করার মতো কাজ থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। তাদের মূল দায়িত্ব হলো সীমান্ত টহল দেওয়া এবং বর্ডার পেট্রোল এজেন্টের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা। সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল স্কট নৌম্যান বলেছেন, “আমরা যখনই প্রয়োজন মনে করি, তখনই সৈন্যদের কাজে লাগাতে পারি। এমনকি, তাদের দিনের পর দিন দুর্গম এলাকায় মোতায়েন করা যায়।”

তবে, সীমান্ত এলাকায় সামরিকীকরণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ ‘পস কমিতাটাস অ্যাক্ট’ -এর লঙ্ঘন হতে পারে। এই আইনে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বেসামরিক আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

অন্যদিকে, সীমান্ত অঞ্চলে বসবাসকারী কিছু মানুষ সামরিক বাহিনীর এই কার্যক্রমের কারণে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটার অভিযোগ করেছেন। তাদের মতে, সামরিকীকরণের ফলে শিকার, হাইকিং বা অফরোড মোটর স্পোর্টসের মতো বিনোদনমূলক কার্যক্রমগুলো কঠিন হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, অবৈধ অনুপ্রবেশের হার কমে যাওয়াকে সামরিক বাহিনীর সাফল্যের একটি দিক হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে, জেনারেল নৌম্যান সতর্ক করে বলেছেন, গ্রীষ্মের তীব্র গরমের পর অনুপ্রবেশের সংখ্যা আবার বাড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার এই পদক্ষেপ নিয়ে বিভিন্ন মহলে ভিন্নমত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, এটি দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ। আবার অনেকে মনে করেন, এর ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং স্থানীয় জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *