ডোনাল্ড ট্রাম্প: নিজের ভাবমূর্তি গড়তে ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ!

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে বিভিন্ন প্রভাবশালী মার্কিন ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ট্রাম্প তাদের ব্যবহার করেছেন নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে এবং বিভিন্ন নীতি বাস্তবায়নে।

এই সম্পর্কগুলো ছিল পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে গঠিত, যেখানে ব্যবসায়ীরা শুল্ক এবং নিয়ন্ত্রন সংক্রান্ত সুবিধা পাওয়ার আশায় ছিলেন, আর ট্রাম্প তাদের ব্যবহার করেছেন অর্থনৈতিক সাফল্যের চিত্র তুলে ধরতে।

সম্প্রতি, মধ্যপ্রাচ্য সফরে ট্রাম্পের সফরসঙ্গী হয়েছিলেন এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে তেল ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকাররা। ট্রাম্পের এই সফরের সময়, ব্যবসায়িক নেতারা যেন তার দলেরই অংশ হয়ে গিয়েছিলেন।

তারা নিয়মিতভাবে হোয়াইট হাউসে যেতেন এবং ওভাল অফিসে বৈঠক করতেন। নিয়ম নীতির সুবিধা ও শুল্ক হ্রাসের আশায় তারা ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতেন।

তবে, ট্রাম্পের সঙ্গে সময় কাটানো সবসময় ব্যবসায়ীদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেনি। অ্যাপল, অ্যামাজন, ওয়ালমার্টের মতো বড় কোম্পানিগুলোও ট্রাম্পের সমালোচনার শিকার হয়েছে।

এর কারণ হিসেবে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিলেও, অনেক সময় তা তাদের মুনাফার জন্য সহায়ক হয়নি।

বিভিন্ন সময়ে ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে ব্যবসায়ীরা বেশ চাপে ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, যা তাদের ব্যবসার খরচ বাড়িয়ে দেয়।

আবার, কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ট্রাম্প তার নীতি পরিবর্তনে ব্যবসায়ীদের প্রভাবিত করেছেন। যেমন, জে পি মর্গান চেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যামি ডিমনের মন্তব্যের পর ট্রাম্প শুল্ক নীতি কিছুটা শিথিল করেন।

এই ঘটনার পাশাপাশি, ট্রাম্প বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করেছেন। ফরাসি বিলাসবহুল কোম্পানি এলভিএমএইচের প্রধান নির্বাহী বার্নার্ড আর্নল্টের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল।

এলভিএমএইচের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান টিফানির তৈরি ‘মেডেলস অফ স্যাক্রিফাইস’ পুরস্কার ট্রাম্প ফ্লোরিডার নিহত শেরিফ ডেপুটিদের পরিবারের হাতে তুলে দেন। যদিও এলভিএমএইচের শেয়ারের দর পতন হয়েছিল, তবুও ট্রাম্প আর্নল্টের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন।

অন্যদিকে, অ্যাপল তাদের উৎপাদন ভারতসহ অন্যান্য দেশে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করায় ট্রাম্প অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে বলেছিলেন, “আমি তোমাকে অনেক সুযোগ দিয়েছি, কিন্তু এখন শুনছি তুমি ভারতে সবকিছু বানাচ্ছো।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই ব্যবসায়িক সম্পর্কগুলো ছিল বেশ জটিল। তিনি একদিকে যেমন ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিয়েছেন, তেমনি তাদের সমালোচনা করতেও দ্বিধা করেননি।

এই ধরনের সম্পর্ক ব্যবসা এবং রাজনীতির মধ্যেকার সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *