মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু গবেষণা কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত এই গবেষণা কেন্দ্রটি নাসা-র (NASA) অধীনে কাজ করত এবং এখানকার বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর গবেষণা চালাতেন।
সম্প্রতি, এই কেন্দ্রের ইজারা বাতিল করা হয়েছে, যা জলবায়ু বিষয়ক গবেষণায় একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নাসার ‘গডার্ড ইনস্টিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজ’ (GISS) -এর প্রধান কার্যালয়টি ছিল কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই গবেষণা কেন্দ্রটি মূলত বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ নিয়ে মডেল তৈরি করত।
জানা গেছে, আগামী ৩১শে মে থেকে এই কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে, সেখানকার বিজ্ঞানীরা এখন থেকে দূর থেকে, অর্থাৎ ‘রিমোট ওয়ার্ক’-এর মাধ্যমে কাজ করবেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপের কারণে জলবায়ু বিষয়ক গবেষণায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নাসা বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে গবেষকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে।
একইসঙ্গে, বিজ্ঞান বিষয়ক অন্যান্য প্রকল্পের ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ আরও বাড়ছে। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বৃদ্ধি, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া।
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো এমনিতেই জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, জলবায়ু গবেষণা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণেও সংকট সৃষ্টি হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক কারণও থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগত কিছু বিষয়ে মতবিরোধ ছিল।
এছাড়াও, গবেষণা খাতে ফেডারেল তহবিল বন্ধ করারও একটি পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, নাসার জলবায়ু গবেষণা কেন্দ্রের ইজারা বাতিলের সিদ্ধান্ত বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
নাসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিজ্ঞানীরা যাতে সুচারুভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, গবেষণা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, বিজ্ঞানীরা নতুন একটি স্থায়ী অফিসের জন্য অপেক্ষা করছেন।
গডার্ড ইনস্টিটিউটের পরিচালক গ্যাভিন স্কিমিডট (Gavin Schmidt) জানিয়েছেন, “ভবন দিয়ে বিজ্ঞান হয় না, মানুষই বিজ্ঞান করে। তাই, গবেষণা চলবে এবং ডেটা ও ফলাফলও পাওয়া যাবে।”
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় গবেষণা ও বিজ্ঞানচর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই, নাসা-র এই গবেষণা কেন্দ্র বন্ধের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন