ফেন্টানিলের বিনিময়ে শুল্ক কমাচ্ছেন ট্রাম্প: কি ঘটতে চলেছে?

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর থেকে শুল্ক কমানোর একটি চুক্তি করেছেন। এর বিনিময়ে চীন জানিয়েছে তারা তাদের দেশে উৎপাদিত ফেন্টানাইল নামক মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি করেছে। ফেন্টানাইল একটি শক্তিশালী মাদক, যা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক উদ্বেগের কারণ।

এই মাদক পাচার বন্ধ করতে ট্রাম্প প্রশাসনের মূল লক্ষ্য ছিল চীনের সহযোগিতা আদায় করা। বাণিজ্য যুদ্ধের অংশ হিসেবে চীন থেকে আসা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, যার ফলস্বরূপ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের আশা ছিল, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে চীন ফেন্টানাইল উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ করতে রাজি হবে।

চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনের কিছু পণ্যের ওপর থেকে ১০ শতাংশ শুল্ক কমাবে। এর ফলে চীনের পণ্যের সর্বনিম্ন শুল্ক হার দাঁড়াবে ২০ শতাংশে, যা আগে অনেক বেশি ছিল।

যদিও এই ছাড় দেওয়ার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের পণ্যের প্রবেশ সহজ হবে, তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর সুফল পাওয়া কঠিন হতে পারে। কারণ, অতীতে চীন বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেনি।

এই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু মিত্র দেশ, যেমন – মেক্সিকো এবং কানাডার সঙ্গে সম্পর্ক আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এই দেশগুলোও ফেন্টানাইলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেষ্টা করছে এবং তাদের উপরও শুল্কের বোঝা রয়েছে।

এই চুক্তির পেছনের কারণ হিসেবে দেখা যায়, ট্রাম্প প্রশাসন চীনের কাছ থেকে ফেন্টানাইল সমস্যার সমাধানে কিছুটা অগ্রগতি চাইছে। এছাড়াও, শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সংকট তৈরি হয়েছিল।

এই পরিস্থিতিতে, চীনকে কিছুটা ছাড় দিয়ে বাণিজ্য আলোচনা চালিয়ে যাওয়া ট্রাম্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে, এই চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।

অতীতে চীন বাণিজ্য সংক্রান্ত অনেক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। ফেন্টানাইল সমস্যার সমাধানে চীনের আন্তরিকতা কতটুকু, তা এখনো স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে, শুল্ক কমানোর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কিছু পণ্যের দাম কমতে পারে, যা ভোক্তাদের জন্য কিছুটা স্বস্তি নিয়ে আসবে।

তবে, সামগ্রিকভাবে এই চুক্তির ফল কী হবে, তা সময় বলবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তবে এর সাফল্য নির্ভর করবে উভয়পক্ষের আন্তরিকতা এবং প্রতিশ্রুতি পালনের ওপর।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *