যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক ক্যাবিনেট বৈঠকে চীন, জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নিয়ে বেশ কিছু ভিত্তিহীন মন্তব্য করেছেন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের এই বক্তব্যগুলোর অনেকগুলোই সঠিক নয়। তাঁর এই ধরনের ভুল তথ্য উপস্থাপন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বাণিজ্য বিষয়ক আলোচনার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
ট্রাম্পের দেওয়া একটি উল্লেখযোগ্য মিথ্যা তথ্য ছিল চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে। তিনি দাবি করেন, চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বজায় রেখেছে। কিন্তু সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে পণ্য ও সেবার বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬৩ বিলিয়ন ডলার।
এমনকি যদি শুধু পণ্যের বাণিজ্য হিসাব করা হয়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ভালো অবস্থানে রয়েছে, তাহলেও এই ঘাটতি ছিল প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন ডলার।
ট্রাম্প প্রায়ই বলে থাকেন, তিনি চীনের ওপর যে শুল্ক আরোপ করেছিলেন, তার ফলে চীন সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে শত শত বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, শুল্কের অর্থ পরিশোধ করে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা, চীনের রপ্তানিকারকরা নয়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রাম্পের আমলে চীনের উপর আরোপিত শুল্কের বেশিরভাগ খরচ বহন করতে হয়েছে আমেরিকানদেরই।
জাপানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি নিয়ে ট্রাম্পের আরেকটি ভুল তথ্য ছিল। তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র জাপানকে রক্ষা করে এবং এর জন্য ‘শত শত বিলিয়ন ডলার’ খরচ করে, অথচ জাপান কোনো অর্থ দেয় না।
বাস্তবে, জাপান প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতির জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলার সহায়তা করে থাকে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জাপান যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতির জন্য নগদ অর্থ এবং অন্যান্য সহায়তা বাবদ প্রায় ১২.৬ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে।
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রীয় বাহিনীর ব্যবহারের জন্য জমি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাবদ জাপান অনেক খরচ মওকুফ করে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন গঠনের প্রেক্ষাপট নিয়েও ট্রাম্পের মন্তব্য সঠিক নয়। তিনি প্রায়ই বলে থাকেন, ইইউ গঠিত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধা নেওয়ার জন্য।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইতিহাস সম্পর্কে অবগত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই দাবির কোনো ভিত্তি নেই। বরং, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল এবং ইউরোপীয় সংহতিকে সমর্থন জুগিয়েছিল।
ট্রাম্প তাঁর শাসনামলে মূল্যস্ফীতি ছিল না বলেও দাবি করেছেন। যদিও পরিসংখ্যান বলছে, তাঁর প্রথম মেয়াদের শেষে মূল্যস্ফীতি প্রায় ৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল।
কোভিড-১৯ মহামারীর সময়, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে যখন তিনি ক্ষমতা ছাড়েন, তখন বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১.৪ শতাংশ।
এছাড়াও, অভিবাসন এবং কারাগার বিষয়ক কিছু দাবিতেও ট্রাম্পের তথ্যের গরমিল পাওয়া যায়। তিনি প্রায়ই অভিযোগ করেন, বিভিন্ন দেশের সরকার তাঁদের কারাগার, মানসিক হাসপাতাল এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে লোকজনকে বের করে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে।
তবে এই দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিশ্বব্যাপী কারাবন্দীর সংখ্যাও তাঁর দাবির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
বরং, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এই সংখ্যা বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণ নিয়েও ট্রাম্প ভুল তথ্য দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর প্রথম মেয়াদে প্রায় ৫৭1 মাইল সীমান্ত প্রাচীর তৈরি করা হয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে নির্মিত প্রাচীরের পরিমাণ ছিল ৪৫৮ মাইল।
রাজনৈতিক নেতাদের দেওয়া এমন ভুল তথ্যগুলো জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে এবং গুরুত্বপূর্ণ নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে যেকোনো বিষয় যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন