যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব?
বিশ্ব অর্থনীতির দুই বৃহৎ শক্তি, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উভয় দেশ একে অপরের পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছে, যা বিশ্ব বাণিজ্যকে নতুন করে প্রভাবিত করছে। এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলি নিয়ে আলোচনা করা অপরিহার্য।
যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্য ঘাটতির অভিযোগ এনে শুল্ক আরোপ শুরু করেন। এর জবাবে চীনও পাল্টা শুল্ক বৃদ্ধি করে। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য ছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তবে, অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন যে ট্রাম্পের এই লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হবে।
বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ইতিমধ্যেই কিছু প্রভাব দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে সয়াবিন রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এর কারণ হিসেবে চীনের পাল্টা শুল্ককে দায়ী করা হচ্ছে। চীনের এই পদক্ষেপ মার্কিন কৃষকদের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব না পড়লেও, বাংলাদেশের অর্থনীতিও এর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, চীন বাংলাদেশের একটি প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসে চীন থেকে। এমন পরিস্থিতিতে, যদি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকে, তবে তা বিশ্ব বাজারে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশের বাজারেও মূল্যস্ফীতি দেখা দিতে পারে, যা ভোক্তাদের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন এই বাণিজ্য যুদ্ধের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা তাদের আমদানি পণ্যের উৎসকে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা তাদের জন্য একটি কৌশলগত সুবিধা তৈরি করেছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো এই বাণিজ্য যুদ্ধে সরাসরি জড়িত হতে খুব একটা আগ্রহী নয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করে বলেছে, শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও হ্রাস পেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই বাণিজ্য যুদ্ধের রাজনৈতিক দিকও রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার কারণে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পদক্ষেপগুলো তাঁর জনপ্রিয়তাকে প্রভাবিত করতে পারে। অন্যদিকে, চীনের সরকার তুলনামূলকভাবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র গত বছর চীন থেকে প্রায় ৪৩৮.৯ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪৭ লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি) মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। এই বিশাল বাণিজ্য সম্পর্কের কারণে, উভয় দেশই একে অপরের উপর নির্ভরশীল।
এক্ষেত্রে, বাংলাদেশের জন্য প্রধান উদ্বেগের বিষয় হলো, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখা। কারণ, চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়লে, তা দেশের বাজারে প্রভাব ফেলবে। চীন যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ জেতার উদ্দেশ্যে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়, তবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে অবগত থাকা বাংলাদেশের নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের জন্য জরুরি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা