মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে আমেরিকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এই ঘটনা বাণিজ্যনীতির এক গভীর সংকটকে সামনে নিয়ে এসেছে, যা বাংলাদেশের ব্যবসায়ী মহলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি শিক্ষা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ছোট ব্যবসার উদ্যোক্তা, যারা তাদের ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও অন্যান্য উপকরণ চীন থেকে আমদানি করেন, তারা এখন মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন। অতিরিক্ত শুল্কের কারণে তাদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে, যা ব্যবসার টিকে থাকার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডেনভারের ‘রিটান্ড জুয়েলারি’ নামের একটি ক্ষুদ্র ব্যবসা চালান ক্রিস্টিনা ও ইয়ান লেসি দম্পতি। তারা পুরনো গিটার ও বেহালা’র তার দিয়ে গহনা তৈরি করেন।
তাদের ব্যবসার বার্ষিক আয় প্রায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় হিসাব করলে প্রায় X কোটি টাকা)। কিন্তু চীনের থেকে আসা কাঁচামালের ওপর শুল্ক বাড়ায় তাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।
ছোট ব্যবসার অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন ‘স্মল বিজনেস মেজরিটি’-র প্রধান জন আরেনস্মেয়ারের মতে, এই শুল্কের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হয় পণ্যের দাম বাড়াতে হবে, কর্মী ছাঁটাই করতে হবে, অথবা ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে।
কারণ, তাদের পক্ষে স্থানীয় বাজার থেকে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। উদাহরণস্বরূপ, রিটান্ড জুয়েলারি-র ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় পুঁতি, শিকল, ক্ল্যাসপ ও হুক আসে চীন থেকে।
তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের উপকরণ তৈরি হয় না। তাই, তাদের পক্ষে দাম বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই।
একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে ‘মিচেল গ্রুপ’ নামের একটি টেক্সটাইল কোম্পানি। ইলিনয়-এর এই পারিবারিক ব্যবসাটি বছরে প্রায় ১ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় Y কোটি টাকা) আয় করে।
কোম্পানির চিফ অপারেটিং অফিসার অ্যান ব্রুনেটের মতে, শুল্কের কারণে তাদের নগদ অর্থের প্রবাহে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের পণ্য গুদামজাত করে রাখতে হচ্ছে, যা তাদের ব্যবসার জন্য বাড়তি খরচ তৈরি করছে।
মিচেল গ্রুপের প্রেসিডেন্ট বিল ফিশ জানিয়েছেন, তারা উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য ভিয়েতনাম, ভারত, মালয়েশিয়া এবং এমনকি ইউরোপের বাজার অনুসন্ধান করছেন।
কিন্তু চীনের মতো অবকাঠামো অন্য কোথাও পাওয়া কঠিন। ফিশ আরও উল্লেখ করেন, তাদের প্রয়োজনীয় বিশেষায়িত কাপড় ও উপাদানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে সহজলভ্য নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কনীতি দেশটির অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে খুব বেশি কাজে আসবে না। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পে বিদেশি বাজারের ওপর নির্ভরতা তৈরি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতি এবং আমদানি-নির্ভরতার ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা।
বিশ্বায়নের এই যুগে, বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়িক নীতিগুলি একে অপরের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই, বাজারের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারলে ব্যবসার টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন