১০০ দিনে চীন নিয়ে ট্রাম্পের ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত! তোলপাড় বিশ্বজুড়ে!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ: বাংলাদেশের জন্য কী বার্তা?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও কঠিন করে তুলেছেন। তার এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতিতে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য, নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই বাণিজ্য নীতি কিভাবে তৈরি হয়েছে, এর মূল উদ্দেশ্য কি, এবং এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলোই বা কি—এসব বিষয় নিয়েই আজকের আলোচনা।

২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রথমবার ক্ষমতায় আসেন, তখন থেকেই তিনি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন। তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনে, এই নীতি আরও কঠোর রূপ নেয়।

চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কিছু পণ্যের ওপর এই শুল্কের হার ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর ফলস্বরূপ, চীনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। চীনের এই পদক্ষেপের কারণে দুই দেশের মধ্যে কার্যত একটি বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্য নীতির মূল কারণ হলো, তিনি মনে করেন চীন দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক থেকে সুবিধা নিচ্ছে। তার মতে, চীন বিশ্বায়নের সুযোগ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারকে ব্যবহার করেছে।

এই কারণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকদের জন্য ভালো মানের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চান, যা মূলত নীল কলার শ্রমিকদের কাজের সুযোগ বৃদ্ধি করবে। এছাড়া, তিনি চীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বিক্রির সুযোগ আরও বাড়াতে আগ্রহী।

আর্ন্তজাতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই নীতির মূল লক্ষ্য হলো চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। এর মাধ্যমে তিনি বেইজিংকে বাণিজ্য নিয়ে নতুন করে আলোচনা করতে বাধ্য করতে চাইছেন।

তবে, এই ধরনের কঠোর নীতি অনেক সময় হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ, এতে করে চীন হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও কমিয়ে দিতে পারে।

এই বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর।

চীন বর্তমানে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। তাই, চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কিছু প্রভাব পড়তে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্কের প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া, চীন যদি অন্য কোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ায়, তবে সেখানেও বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে।

অতীতে, ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি ছিলো মূলত যুক্তরাষ্ট্র-কেন্দ্রিক। তবে, এবার তিনি বিশ্বজুড়ে তার বাণিজ্য নীতিকে আরও বিস্তৃত করতে চাইছেন।

তিনি চান, অন্যান্য দেশগুলোও যেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও ন্যায্যভাবে পরিচালনা করে। তিনি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করার চেষ্টা করছেন এবং এর মাধ্যমে চীনকে এড়িয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছেন।

তবে, এই বাণিজ্য নীতির ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। একদিকে যেমন শুল্ক কমানোর জন্য আলোচনা চলছে, তেমনি আবার বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন সতর্ক থাকা এবং বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেওয়া।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *