মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ আবারও গভীর সংকটে পতিত হয়েছে। সম্প্রতি, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কারণে উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
এই পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে, চীনের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন সফটওয়্যার বিক্রির উপর বিধিনিষেধ আরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের সম্ভাবনা।
এই ঘটনাগুলো এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন বিশ্বের বৃহত্তম এই দুই অর্থনীতির দেশ বাণিজ্য যুদ্ধের একটি ভঙ্গুর সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল। উভয় দেশই শুল্ক হ্রাস করতে রাজি হয়েছিল, যা বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থার জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ ছিল।
এর ফলে, চীন থেকে পণ্য রপ্তানি পুনরায় শুরু হয়েছিল এবং চীনা গণমাধ্যম এটিকে একটি জাতীয় বিজয় হিসেবে উদযাপন করেছিল।
তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই দুটি পদক্ষেপ চীনকে হতাশ করেছে। এর মধ্যে প্রথম পদক্ষেপটি হলো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছু আমেরিকান কোম্পানিকে চীনে সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন করার সফটওয়্যার বিক্রি করতে বাধা দিয়েছেন। এই ছোট চিপগুলো আমাদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার, অটোমোবাইল এবং গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি সহ বিভিন্ন প্রযুক্তির মূল ভিত্তি।
এই চিপগুলোর উৎপাদন এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জনের জন্য চীন কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এখন, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের সেই প্রচেষ্টা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চীনের দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তার ধারণাটিকে অতিমাত্রায় ব্যবহার করছে এবং রফতানি নিয়ন্ত্রণের অপব্যবহার করছে।
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউজের দ্বিতীয় আঘাতটি ছিল আরও গুরুতর। মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিও ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করার পদক্ষেপ নেবে, বিশেষ করে যারা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পড়াশোনা করছেন বা চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজারের বেশি চীনা শিক্ষার্থী রয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের শিক্ষা জীবনের উপর অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ক্যান্ডি বলেছেন, তিনি তার ভিসা বাতিল হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার স্নাতক শেষ হওয়ার আগেই যদি ভিসা বাতিল হয়ে যায়, তবে আমি খুব হতাশ হব।”
যদিও ভিসা বাতিলের এই সিদ্ধান্ত একটি ধাক্কা, তবে কেউ কেউ মনে করেন, এটি শেষ পর্যন্ত চীনের জন্য উপকারী হতে পারে। কারণ, এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেক চীনা শিক্ষার্থী, এমনকি যারা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল, তারা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে না গিয়ে দেশে ফিরে আসবে অথবা চীনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই পড়াশোনা চালিয়ে যাবে।
ফলে, চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে এটি সহায়ক হবে। তবে, বুধবার চীনের জন্য একটি ভালো খবরও ছিল। একটি ফেডারেল আদালত ট্রাম্প প্রশাসনকে চীনের উপর আরোপিত শুল্কের বেশিরভাগ অংশ, যেমন ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা থেকে বিরত রাখে।
কিন্তু এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দ্রুত আপিল করা হয়েছে, ফলে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্কের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।
তথ্য সূত্র: সিএনএন