ট্রাম্পের চীন বাণিজ্য যুদ্ধ: কৃষকদের কান্না!

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন করে মাথাচাড়া দেওয়ায় এর সরাসরি প্রভাব পড়তে শুরু করেছে মার্কিন কৃষকদের ওপর। বিশেষ করে, চীনের পক্ষ থেকে মার্কিন কৃষি পণ্য, বিশেষ করে সয়াবিনের ওপর শুল্ক বাড়ানোয় দেশটির কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে শুরু হওয়া এই বাণিজ্য যুদ্ধ এখনো চলছে, যা উভয় দেশের অর্থনীতিকেই প্রভাবিত করছে।

চীন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে, যার ফলে সয়াবিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পণ্যের ওপর শুল্কের পরিমাণ ১৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর ফলস্বরূপ, মার্কিন সয়াবিন রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, কারণ চীন এখন বিকল্প বাজার খুঁজছে।

বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে মার্কিন কৃষকদের ক্ষতির পরিমাণ বিশাল। ২০১৮ সালের বাণিজ্য যুদ্ধে মার্কিন কৃষি খাত প্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি) ক্ষতির শিকার হয়েছিল, যার মধ্যে ৭১ শতাংশই ছিল সয়াবিন সংশ্লিষ্ট।

এখন, যখন বাণিজ্য যুদ্ধ আবার শুরু হয়েছে, তখন এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চীন এখন বিকল্প হিসেবে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছে। ব্রাজিল ইতিমধ্যেই চীনের জন্য সয়াবিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠেছে।

২০১০ সাল থেকে ব্রাজিলের সয়াবিন রপ্তানি ২৮০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। শুধু তাই নয়, গত বছর ব্রাজিলের মোট সয়াবিন রপ্তানির ৭৩ শতাংশই গেছে চীনে। এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের বৃহত্তম বাজার হারাতে পারে।

চীন শুধু ব্রাজিল নয়, অন্যান্য দেশের সঙ্গেও বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছে। তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট (আসিয়ান) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা শুরু করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

এর মাধ্যমে চীন একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে, তেমনি নিজেদের বাজারের জন্য বিকল্প পথ তৈরি করতে চাইছে।

এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দামের পরিবর্তন হতে পারে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ।

কারণ, বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে, যা বাংলাদেশের আমদানি খরচকে প্রভাবিত করবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার এই বাণিজ্য যুদ্ধ কবে শেষ হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে, এর প্রভাব যে দীর্ঘকাল ধরে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনুভূত হবে, তা নিশ্চিত।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *