ট্রাম্পের শুল্ক: চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যে কী প্রভাব?

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ: বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য

বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে শুরু হওয়া এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে উভয় দেশই একে অপরের পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছে।

এর ফলস্বরূপ, বিশ্ব অর্থনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

২০২৪ সালে, যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে প্রায় ৪৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে, যেখানে চীন একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৪৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য কিনেছে। এই বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ট্রাম্প প্রশাসন চীনের উপর শুল্ক বাড়িয়ে দেয়, যা মূলত একটি বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।

এর জবাবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করে।

এই শুল্ক যুদ্ধের কারণে স্মার্টফোন, সেমিকন্ডাক্টর ও পোশাকের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ, চীন থেকে আসা পণ্যের উপর শুল্ক বাড়ানোয় তা আমেরিকার বাজারে আরও বেশি দামে বিক্রি হতে শুরু করেছে।

আবার, চীনও যুক্তরাষ্ট্রের থেকে আসা পণ্যের উপর শুল্ক বসানোর ফলে তাদের বাজারে মার্কিন পণ্যের দাম বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনের উপর বিভিন্ন সময়ে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে, ট্রাম্প প্রশাসন চীনের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এর পরে, আরও কয়েক দফায় শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়, যার মধ্যে কিছু পণ্যের উপর সর্বোচ্চ ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক অন্তর্ভুক্ত ছিল।

চীনও এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর শুল্ক বাড়িয়েছে, যা উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও কঠিন করে তুলেছে।

এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে উভয় দেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে, তা এখন আলোচনার বিষয়। চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এই বাণিজ্য যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত মোকাবেলা করতে প্রস্তুত। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের শুল্ক আরোপ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ভালো নয়।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হলো, বিশ্ব বাণিজ্যের এই অস্থিরতা আমাদের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি চীন থেকে আমদানি করা ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম বাড়ে, তবে তা বাংলাদেশের বাজারেও এর প্রভাব ফেলবে।

কারণ, চীন থেকে আমদানি করা বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক পণ্য, যেমন – মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ইত্যাদি আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাবগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। এই পরিস্থিতি আমাদের আমদানি-রপ্তানি নীতি এবং বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন করে কৌশল নির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *