ট্রাম্পের নয়া চালে কি তবে ছাড় পেল চীন? ইলেক্ট্রনিক্সে শুল্ক বিতর্ক!

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন মোড় নিয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিলেও, পরবর্তীতে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।

এই সিদ্ধান্তের ফলে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং অন্যান্য প্রযুক্তি পণ্যের দামের উপর কেমন প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। সেই সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর সম্ভাব্য প্রভাব কী, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।

শুরুর দিকে, মার্কিন প্রশাসন কিছু চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দেয়। এর মধ্যে ছিল স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ফ্ল্যাশ ড্রাইভ এবং আরও অনেক প্রযুক্তি পণ্য। এই ছাড়ের ফলে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিল, কারণ তারা চীনের তৈরি পণ্যের উপর নির্ভরশীল।

অ্যাপল এবং এনভিডিয়ার মতো কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামও বেড়েছিল। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসন আবার শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দেয়, যা অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।

আসলে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এই শুল্ক বিতর্ক নতুন নয়। ট্রাম্পের আগের মেয়াদেও এমন শুল্ক আরোপের ঘটনা ঘটেছিল। এমনকি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন।

সম্প্রতি, ট্রাম্প প্রশাসন এপ্রিল মাসের ২ তারিখের পর থেকে কিছু ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক তুলে নেয়। এর মধ্যে ছিল কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ডিস্ক ড্রাইভ এবং ডেটা প্রক্রিয়াকরণ সরঞ্জাম।

স্মার্টফোন, মেমরি কার্ড, সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস, সৌর কোষ, মডেম, রাউটার ও ফ্ল্যাট প্যানেল ডিসপ্লে-এর মতো পণ্যও এই ছাড়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তবে, এই ছাড় কি সত্যিই কার্যকর? ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ছাড়গুলো সাময়িক। খুব শীঘ্রই সেমিকন্ডাক্টর সহ অন্যান্য পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।

অন্যদিকে, চীনও এর জবাব দিতে প্রস্তুত। জানা গেছে, চীনও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে পণ্য রপ্তানির ওপর প্রায় ১৪৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। অন্যদিকে, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কের পরিমাণ প্রায় ১২৫ শতাংশ।

এমন পরিস্থিতিতে উভয় দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই শুল্ক আরোপের ফলে মার্কিন ভোক্তাদের ওপর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপ সৃষ্টি হবে। এর কারণ, অনেক মার্কিন কোম্পানি তাদের পণ্যের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল।

উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপলের প্রায় ৯০ শতাংশ আইফোন চীনে তৈরি হয়।

তাহলে বাংলাদেশের জন্য এর প্রভাব কী? বাংলাদেশ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি করে থাকে। চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়লে, তা বাংলাদেশের বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে।

তবে, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে যদি চীন থেকে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো অন্য কোনো দেশে তাদের ব্যবসা স্থানান্তরিত করে, তাহলে বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে।

সেক্ষেত্রে, বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে আরও বেশি সুবিধা পেতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের দিকে নজর রাখা জরুরি। নিজেদের বাণিজ্য নীতিকে সেই অনুযায়ী সাজিয়ে, দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে হবে।

সবশেষে, প্রশ্ন হলো – যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এই বাণিজ্য যুদ্ধের শেষ কোথায়? এর ফলস্বরূপ বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও কী কী পরিবর্তন আসবে?

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *