ট্রাম্পের মিথ্যাচারে চাকরি নিয়ে বাড়ছে বিতর্ক, ক্ষতি কী?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই ডেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলায়। এই ঘটনায় অর্থনীতির নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।

হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা সম্প্রতি প্রকাশিত চাকরির হিসাবের সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, এই সংখ্যাগুলো সরকারের ‘স্বর্ণ যুগ’ সম্পর্কিত ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এর প্রতিক্রিয়ায়, শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর কমিশনার এরিকা ম্যাকেন্টারফারকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা খর্ব করারও চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বিনিয়োগকারী, কোম্পানি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে।

এই সংস্থাগুলো অর্থনীতির স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক তথ্যের ওপর নির্ভর করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়, যা কোটি কোটি মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। এমনকি ফেডারেল রিজার্ভও তাদের মুদ্রানীতি নির্ধারণের জন্য এই পরিসংখ্যান ব্যবহার করে।

অর্থনৈতিক তথ্য গোপন করার ফলস্বরূপ আর্জেন্টিনা এবং গ্রিসের মতো দেশগুলোতে অর্থনৈতিক সংকট দেখা গিয়েছিল। এমনকি চীনের ভুয়া পরিসংখ্যানের কারণে দুর্নীতি বেড়েছিল, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করেছিল।

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ কেবল একটি সংকীর্ণ অর্থনৈতিক বিষয় নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্প এমন একজন প্রেসিডেন্ট যিনি নিজেকে অসীম ক্ষমতার অধিকারী মনে করেন এবং যেকোনো পরিণতির ঊর্ধ্বে অবস্থান করতে চান। তিনি মনে করেন, তার সব ক্ষমতা আছে।

এর আগে, ট্রাম্প তার অনুসারীদের বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যা দেখা যাচ্ছে এবং যা পড়া হচ্ছে, তা-ই আসল ঘটনা নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন সরকারের প্রকাশিত তথ্যের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হলে তা আগামী বছরগুলোতে রিপাবলিকানদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। প্রাক্তন ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিস্টিক্স কমিশনার উইলিয়াম বিচ সিএনএনকে বলেছেন, “ব্যুরো বিশ্বের সেরা পরিসংখ্যান সংস্থা।

এর সংখ্যা সারা বিশ্বে বিশ্বাসযোগ্য। তবে প্রেসিডেন্টের এই আক্রমণের ফলে দীর্ঘমেয়াদে সেই আস্থার ভিত দুর্বল হতে পারে।”

হোয়াইট হাউজের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের পরিচালক কেভিন হাসেট এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, চাকরির হিসাব সম্ভবত “রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হতে পারে”। এই মন্তব্যের জেরে ডেমোক্রেট সিনেটর চাক শুমার হাসেটকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জ্যামিসন গ্রিয়ার বলেছেন, “আপনাকে কিছুটা নির্ভরযোগ্য সংখ্যা রাখতে হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “পর্যালোচনা সব সময়ই থাকে, তবে মাঝে মাঝে দেখা যায় এই পর্যালোচনাগুলো চরম পথে যাচ্ছে।

প্রেসিডেন্টই তো প্রেসিডেন্ট। তিনি নির্বাহী বিভাগে কে কাজ করবে, তা বেছে নিতে পারেন।”

জুলাই মাসে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, অর্থনীতিতে মাত্র ৭৩,০০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। মে এবং জুনের মাসগুলোতেও কর্মসংখ্যার হিসাব সংশোধন করে কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, যদি ট্রাম্পের পছন্দের কোনো ব্যক্তি ব্যুরোর প্রধান হন, তাহলে কি তথ্যের অপব্যবহার হবে? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ গভীর উদ্বেগের কারণ।

কারণ, এর আগে তিনি কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায়ও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এমনকি ২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচনের ফলকে অস্বীকার করার চেষ্টা করেছিলেন।

ট্রাম্পের এসব কর্মকাণ্ড কর্তৃত্ববাদের দিকে ইঙ্গিত করে। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের মতো নেতাদের সঙ্গে তার তুলনা করা হচ্ছে, যারা প্রায়ই নিজেদের ক্ষমতাকে সুসংহত করতে মিথ্যা তথ্যের আশ্রয় নেন।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *