মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমবাজারের হাল: মন্দা নাকি নীতিগত পরিবর্তনের ফল?
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু তথ্য বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া কিছু নীতি, যেমন শুল্ক বৃদ্ধি, অভিবাসন নীতি এবং সরকারি ব্যয়ের কাটছাঁট—এগুলো দেশটির অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলছে, তা এখন অনেকের কাছেই আগ্রহের বিষয়। এই প্রেক্ষাপটে, প্রকাশিত হয়েছে জুন মাসের কর্মসংস্থান বিষয়ক একটি প্রতিবেদন।
কর্মসংস্থান পরিস্থিতি: মিশ্র ইঙ্গিত
বেসরকারি সংস্থা ADP-এর তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩৩ হাজার কর্মসংস্থান কমেছে। যদিও অর্থনীতিবিদরা ধারণা করেছিলেন, এই সময়ে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার নতুন চাকরির সৃষ্টি হবে। ADP-এর এই হিসাব সরকারি হিসাবের সঙ্গে সবসময় মেলে না, তবে এটি বাজারের গতিপ্রকৃতি বুঝতে সহায়ক। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ ৩৯ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছিল।
তবে, বাজারের বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জুন মাসের সরকারি হিসাবেও কর্মসংস্থান কিছুটা কমতে পারে। একইসঙ্গে, ধারণা করা হচ্ছে, বেকারত্বের হারও সামান্য বেড়ে ৪.৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যা ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের পর সর্বোচ্চ।
নীতি পরিবর্তনের প্রভাব
বিশ্লেষকরা বলছেন, নীতিগত কিছু পরিবর্তনের কারণে শ্রমবাজারে এই পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, শুল্ক বৃদ্ধি এবং ফেডারেল সরকারের কিছু পদক্ষেপের কারণে অনেক কোম্পানি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিধা বোধ করছে। এর ফলে, অনেক ক্ষেত্রে কর্মী ছাঁটাই না হলেও নতুন করে কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা পিছিয়ে যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ নিল রিচার্ডসন মনে করেন, কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে এই দ্বিধা বেতন বৃদ্ধির হারকে প্রভাবিত করছে না। তবে, এটি একটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে, কারণ এর ফলে শ্রমবাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
শ্রমবাজারের দুর্বলতা: উদ্বেগের কারণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারের এই দুর্বলতা দীর্ঘমেয়াদে দেশটির অর্থনীতির জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ, কর্মসংস্থান কমে গেলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়, যা বাজারের চাহিদা কমিয়ে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে, কোনো অপ্রত্যাশিত অর্থনৈতিক ধাক্কা আসলে তা মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
অন্যদিকে, অভিবাসন নীতিতেও পরিবর্তন আসায় শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাওয়ার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অভিবাসন কমে গেলে, শ্রমিকের অভাব দেখা দিতে পারে এবং এর ফলে বিভিন্ন শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।
ভবিষ্যতের পূর্বাভাস
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারের প্রকৃত চিত্র বুঝতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে, বাজারের গতিপ্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, ভবিষ্যতে নীতি পরিবর্তনের ফলস্বরূপ আরও কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির পরিবর্তন বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে, যার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়, তবে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আবার, প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণও কমে যেতে পারে। তাই, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারের এই পরিবর্তনের দিকে আমাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে।
তথ্য সূত্র: CNN