ট্রাম্পের চলচ্চিত্র বিষয়ক শুল্ক প্রস্তাব: হলিউডের ভবিষ্যৎ এবং বিশ্ব চলচ্চিত্র শিল্পের ওপর প্রভাব।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে তিনি বিদেশি চলচ্চিত্রে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে চান। তার এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, এক সময়ের খ্যাতি সম্পন্ন মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্প, হলিউডকে (Tinseltown) পুনরুজ্জীবিত করা।
তবে, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা কার্যত ফলপ্রসূ হবে না। বরং, এর ফলে চলচ্চিত্র নির্মাণ আরও কঠিন এবং ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বায়নের এই যুগে চলচ্চিত্র নির্মাণ একটি আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া। অনেক মার্কিন চলচ্চিত্র এখন আর শুধু আমেরিকায় তৈরি হয় না।
বরং, বিভিন্ন দেশ, যেমন কানাডা, আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যে ছবির শুটিংয়ের জন্য নির্মাতারা ঝুঁকছেন। এর কারণ হলো, এই দেশগুলো আকর্ষণীয় কর সুবিধা এবং অন্যান্য প্রণোদনা প্রদান করে।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের স্টুডিওগুলোতে ২০২৩ সালে ১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি খরচ করেছে মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাণ সংস্থা ও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো।
চলচ্চিত্র সমালোচকদের মতে, ট্রাম্পের শুল্ক প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। কারণ, একটি চলচ্চিত্রের উৎপত্তিস্থল নির্ধারণ করা বেশ জটিল।
উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি চলচ্চিত্রের কিছু অংশের শুটিং যুক্তরাজ্যে, কিছু অংশের আমেরিকায় এবং কিছু অংশের শুটিং কানাডায় হয়, তবে ছবিটির জাতীয়তা কী হবে, তা নির্ধারণ করা কঠিন।
এছাড়া, হলিউডের অনেক শিল্পী ও কলাকুশলী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কাজ করছেন, কারণ সেখানে কাজের সুযোগ বেশি এবং খরচও তুলনামূলকভাবে কম।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম সম্প্রতি জানিয়েছেন, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সীমিত কর সুবিধা এবং অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার কারণে ক্যালিফোর্নিয়া চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নির্মাণে পিছিয়ে পড়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে চলচ্চিত্র নির্মাণের দিন সংখ্যাও কমে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হলিউডকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে শুল্ক আরোপের পরিবর্তে অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। যেমন, চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রযোজকদের আরও বেশি প্রণোদনা দেওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম খরচ কমানো যেতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরও চলচ্চিত্র ও টিভি শিল্পের জন্য ৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৮০০ বিলিয়ন বাংলাদেশী টাকা) ফেডারেল ট্যাক্স ক্রেডিট তৈরির জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বর্তমানে, হলিউডের শ্রমিকদের উচ্চ বেতন এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রণোদনার অভাবের কারণে বিদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য কাজ করা অনেক বেশি লাভজনক।
এমন পরিস্থিতিতে, ট্রাম্পের শুল্ক প্রস্তাব হয়তো হলিউডের সমস্যা সমাধানে কার্যকর হবে না। বরং, এটি বিশ্ব চলচ্চিত্র শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন