শিরোনাম: ট্রাম্পের আমলে আমেরিকায় নাগরিক অধিকার খর্ব, ১৯৬০ দশকের অর্জনগুলোও প্রশ্নের মুখে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে দেশটির নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে, যা ১৯৬০-এর দশকে অর্জিত অধিকারগুলোর পরিপন্থী। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই নীতিগুলো আমেরিকার ইতিহাসে ‘পুনর্গঠন’ (Reconstruction) যুগের পর নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় আঘাত।
ট্রাম্প প্রশাসন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া বা এর স্বীকৃতি দেওয়া থেকে সরে এসেছে। তাদের প্রধান লক্ষ্য এখন ধর্মীয় স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দেওয়া, বিশেষ করে তথাকথিত ‘খ্রিস্টান-বিরোধী মনোভাব’ দূর করা। এর অংশ হিসেবে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ডাইভার্সিটি, ইক্যুইটি এবং ইনক্লুশন (DEI) প্রোগ্রামগুলোর অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি, শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদেরও শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে, যারা তাদের দেশে ‘বর্ণবাদের শিকার’ বলে দাবি করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ (Department of Justice) তাদের কর্মপরিধি নতুন করে সাজাচ্ছে। ১৯৬০-এর দশকে গঠিত নাগরিক অধিকার বিষয়ক বিভাগটির মূল কাজ ছিল বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য রোধ করা। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে এই বিভাগের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘খ্রিস্টান-বিরোধী মানসিকতা’, ইহুদি বিদ্বেষ এবং ‘উগ্র বামপন্থী’ (woke ideology) মতাদর্শের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপগুলো ১৯৬০-এর দশকে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসনের সময়ে নেওয়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আইনের (যেমন: ভোটাধিকার আইন, ১৯৬৪ সালের নাগরিক অধিকার আইন, ১৯৬৫ সালের অভিবাসন ও জাতীয়তা আইন) পরিপন্থী। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই নীতিগুলো মূলত ‘গ্রেট সোসাইটি’র (Great Society) আইনগুলোকে দুর্বল করার চেষ্টা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘wokeness’ বা সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি সচেতনতা’র ধারণাটি বর্তমানে বেশ আলোচিত। ট্রাম্প প্রশাসন এই ধারণাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে এবং এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। অনেকে মনে করেন, এর ফলে কার্যত বর্ণবাদের প্রতি সমর্থন জানানো হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসন একদিকে যেমন নাগরিক অধিকারের ধারণা থেকে সরে আসছে, তেমনিভাবে তারা ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা’র পক্ষে জোরালোভাবে সমর্থন জানাচ্ছে। এই লক্ষ্যে তারা একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে, যাদের প্রধান কাজ হবে সরকারে ‘খ্রিস্টান-বিরোধী মনোভাব’ দূর করা।
সুপ্ৰিম কোর্টে (Supreme Court) বিচারকরাও গির্জা ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণ নিয়ে নতুন করে আলোচনা করছেন। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এর ফলে করদাতাদের অর্থ দিয়ে ক্যাথলিক চার্চের স্কুলগুলোকে সাহায্য করার সম্ভাবনা তৈরি হবে। ট্রাম্প বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেছেন, তিনি ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর গুরুত্ব দেবেন এবং এ সংক্রান্ত নতুন কমিশন গঠন করবেন।
এই পদক্ষেপগুলোর কারণে অনেকেই উদ্বিগ্ন, কারণ তাদের মতে, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে থাকা ধর্মীয় স্বাধীনতার ধারণা দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং ‘খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদ’ মাথাচাড়া দিতে পারে। সমালোচকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন