মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, যখন ব্যবসার কথা আসে, তখন মুক্ত বাজার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হলো – সরকার কম হস্তক্ষেপ করলে ভালো। কিন্তু প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে, এই ধারণার গুরুতর পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থাগুলো এখন ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে নীরবতা পালন করছে, যা অনেকের কাছে উদ্বেগের কারণ।
সম্প্রতি, ট্রাম্পের কিছু পদক্ষেপ এই নীরবতাকে আরও স্পষ্ট করেছে। উদাহরণস্বরূপ, তিনি চাইছেন যে চিপ প্রস্তুতকারক কোম্পানি এনভিডিয়া (Nvidia)-এর চীন থেকে হওয়া বিক্রয়ের একটি অংশ সরাসরি মার্কিন সরকারের কাছে যাক।
এছাড়াও, তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেছেন এবং ইন্টেল (Intel)-এর মতো সংস্থায় সরকারি অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে, প্রভাবশালী ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো, যেমন ইউএস চেম্বার অফ কমার্স এবং বিজনেস রাউন্ডটেবিল, তাদের পূর্বের কঠোর সমালোচনামূলক অবস্থান থেকে সরে এসেছে।
সাধারণত, এই সংস্থাগুলো সরকারের নীতি এবং করের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে। কিন্তু ট্রাম্পের সরাসরি ব্যবসায় হস্তক্ষেপের বিষয়ে তাদের নীরবতা অনেককেই বিস্মিত করেছে।
ইউএস চেম্বার অফ কমার্স, যা দেশের বৃহত্তম ব্যবসায়িক সংগঠন, অতীতে ফেডারেল কনজিউমার ওয়াচডগ গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল, আবার বিডেন প্রশাসনের স্বাস্থ্যখাতে মূল্য নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু ট্রাম্পের সময়ে তাদের তেমন কোনো সক্রিয় ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই নীরবতার কারণ হলো ভয়ের সংস্কৃতি। ট্রাম্পের প্রশাসন ব্যবসা-বাণিজ্যকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছে। পেনসিলভেনিয়ার ওয়ার্টন স্কুলের অধ্যাপক ফিলিপ এম. নিকোলস-এর মতে, যে কোনো ব্যবসায়ী যদি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন, তবে তার ঝুঁকি নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেকটি বিষয় হলো, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরে আসার সম্ভাবনা, যা ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের হিসাব-নিকাশ তৈরি করেছে। অনেকেই মনে করছেন, সরকারের সমালোচনায় মুখর হলে তারা ট্রাম্পের কোপানলে পড়তে পারেন, যা তাদের ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এর পরিবর্তে, তারা ট্রাম্পের প্রস্তাবিত কর হ্রাসের সুবিধা পেতে চাইছে।
ট্রাম্পের এই অর্থনৈতিক নীতিগুলো শুধু আমেরিকার অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং এর আন্তর্জাতিক প্রভাব রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, তিনি সম্প্রতি চিপ প্রস্তুতকারক কোম্পানি এনভিডিয়া এবং এএমডি (AMD)-কে চীনের বাজারে পণ্য বিক্রির অনুমতি দেওয়ার বিনিময়ে তাদের চীন থেকে হওয়া বিক্রয়ের ১৫ শতাংশ মার্কিন সরকারের কাছে জমা দেওয়ার চুক্তি করেছেন।
এই ধরনের পদক্ষেপকে অনেকে মুক্তবাজার অর্থনীতির পরিপন্থী হিসেবে দেখছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই ধরনের হস্তক্ষেপ মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা তাদের স্বাধীনতা হারাতে পারে এবং সরকারের প্রভাব আরও বাড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন